কালিয়াচক ৩ ব্লকের সুকদেবপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য রাখা নির্মাণ সামগ্রী। —নিজস্ব চিত্র।
মালদহের সুকদেবপুরে খোলা সীমান্তের ভারতীয় ভূখণ্ডে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে বুধবারেও কাজে বাধা দেওয়ায় অভিযুক্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ফলে, সকাল থেকে শুরু হওয়া কাজ দুপুরে বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং বিজিবির মধ্যে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’ হয়। কিন্তু কাজ বন্ধ থাকে। বিকেলে মালদহের মহদিপুরে বিএসএফের বর্ডার আউট-পোস্টে (বিওপি) ফের বিএসএফ-বিজিবি কর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে সুকদেবপুরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হওয়ার কথা। পক্ষান্তরে, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার রনঘাট সীমান্ত এলাকায় সীমান্ত সম্পর্কে বিজিবির দাবি ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মঙ্গলবার, বুধবার তাস্বাভাবিক হয়েছে।
বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের মুখপাত্র এন কে পাণ্ডে এ দিন বলেন, ‘‘সাধারণত সীমান্তের জ়িরো পয়েন্ট থেকে দেড়শো গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথা। কিন্তু মরাগঙ্গা নদীর জন্য সুকদেবপুর সীমান্তে নির্দিষ্ট সীমারেখায় বেড়া দেওয়ায় সমস্যা রয়েছে। এখন যেখানে বেড়া দেওয়া হচ্ছে, তার সম্মতি আগে থেকেই নেওয়া রয়েছে। বিজিবির সঙ্গে আলোচনা চলছে। কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবেই।’’ সূত্রের দাবি, সীমান্তের যে এলাকায় বেড়া দেওয়া হচ্ছে, তা নথি দিয়ে বিজিবি-কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিএসএফ জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ ভাবে বেড়া দেওয়াইতাদের লক্ষ্য।
মালদহের কালিয়াচক-৩ ব্লকের বাখরাবাদ পঞ্চায়েতের সুকদেবপুর বিওপি থেকে শবদলপুর বিওপি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় মরাগঙ্গা নদী থাকায় সেখানে সীমান্ত কার্যত উন্মুক্ত। মঙ্গলবার সেখানে কাঁটাতারের কাজ শুরু হতেই বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজিবির বিরুদ্ধে। উত্তেজনা ছড়ায়। বিএসএফ-বিজিবির পাশাপাশি দু’দেশের সীমান্তের প্রচুর বাসিন্দা জড়ো হন। মঙ্গলবার কাজ হয়নি। এ দিন সকাল ৮টা থেকে ঠিকাদার সংস্থার ১৮ জন শ্রমিক কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য গর্ত খোঁড়া শুরু করেন। অভিযোগ, দুপুরের দিকে ফের বাধা দেয় বিজিবি। দুপুর ২টো থেকে আড়াইটে পর্যন্ত বিএসএফ-বিজিবি বৈঠক চলে। তার পর থেকে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এলাকায় এ দিন প্রচুর বিএসএফ জওয়ান মোতায়েন ছিলেন। চলেছে টহলদারি। মঙ্গলবার সুকদেবপুরের বাসিন্দারা সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের সঙ্গে থাকলেও, এ দিন তাঁদের সেখানে থাকতে দেওয়া হয়নি। সুকদেবপুরের যে এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে, বিকেলের দিকে কিছু মানুষকে সেখানে দেখা যায়। সীমান্ত থেকে দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশের দিকেও রয়েছে ভিড়। সূত্রের দাবি, সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশের দিকে বিজিবি ‘বাঙ্কার’ তৈরি করেছে এবং সেখানে সশস্ত্র জওয়ানেরা রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসএফ আধিকারিকদের দাবি, তাঁরাও তৈরি রয়েছেন।
তবে এই অবস্থায় ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ যাঁদের জমি রয়েছে, তাঁরা পড়েছেন বিপাকে। সুকদেবপুরের চাষি দ্বিজেন মণ্ডল বলেন, ‘‘ওখানে আমার গমখেত। আতঙ্কে জমিতে যেতে পারছি না।’’
উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার রনঘাট সীমান্ত এলাকাতেও প্রায় একই রকম ‘অস্বস্তিকর’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মঙ্গলবার। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমে ওই এলাকায় কোদালিয়া নদী বরাবর ভারতের পাঁচ কিলোমিটার জমি বিজিবি দখল করে নিয়েছে দাবি করে একটি ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) ছড়ায়। এই দাবি নস্যাৎ করে দিলেও, মঙ্গলবার বিএসএফ রনঘাট সীমান্তের মানুষকে নদীতে নামতে নিষেধ করেছিল। বুধবার অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। রনঘাট বিএসএফ ক্যাম্পে গিয়ে বনগাঁর পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন এ দিন।
তথ্য সহায়তা: সীমান্ত মৈত্র