Inuit of Greenland

বরফের রাজ্য থেকে ‘সভ্য’ দেশে এনে অত্যাচার! এক আমেরিকানের লোভে প্রাণ যায় নির্দোষ ছয় ইনুইটের

ইনুইটদের প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার আশ্চর্য শারীরিক ক্ষমতার কথা জানার পর আমেরিকা ও ইউরোপের বহু সংস্থাই তাঁদের শক্তিধর হওয়ার নেপথ্যকারণ খুঁজতে উৎসাহী হয়ে পড়ে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৩০
Share:
০১ ১৬

পৃথিবীর বুকে অস্তিত্বের সংগ্রামে হার না-মানা একদল যোদ্ধার নাম হল এস্কিমো বা ইনুইট। ইনুইটরা দীর্ঘকাল ধরে বাস করছে সাইবেরিয়ার একেবারে পূর্ব কোণে, উত্তর আমেরিকার উত্তর উপকূলে, সুমেরু মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জে ও গ্রিনল্যান্ডে। পৃথিবীর দুর্গম অঞ্চলে প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুঝতে হয় ইনুইটদের। মেরু অঞ্চলের সাদা তুষারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা ও অস্তিত্বের সংগ্রামে হার না-মানার অদম্য জেদই ইনুইটদের অনন্য এক জাতিতে পরিণত করেছে।

০২ ১৬

৯৮০ সালে আইসল্যান্ডের অধিবাসী এরিক দি রেড নামের এক ব্যক্তিকে খুন করার অপরাধে বিতাড়িত করা হয়। এরিকও ভেবেছিলেন তাঁর মৃত্যু আসন্ন, কিন্ত ভাগ্য তাঁকে সুমেরু অঞ্চলের এক বিশাল ভূখন্ডে নিয়ে যায়, যার নাম গ্রিনল্যান্ড।

Advertisement
০৩ ১৬

সেই থেকেই গ্রিনল্যান্ডের কথা ধীরে ধীরে পৃথিবীতে চাউর হতে শুরু করে। তীব্র ঠান্ডায় ও বরফাচ্ছাদিত এই অঞ্চলে বেঁচে থাকাই যেখানে দুষ্কর, সেখানে দেখা মেলে এক গোষ্ঠীর, যারা একদা এস্কিমো নামে পরিচিত ছিল। পরে ইউরোপীয়ানরা এদের নাম দেন ইনুইট।

০৪ ১৬

ইনুইটদের প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার আশ্চর্য শারীরিক ক্ষমতার কথা জানার পর আমেরিকা ও ইউরোপের বহু সংস্থাই তাদের শক্তিধর হওয়ার নেপথ্যকারণ খুঁজতে উৎসাহী হয়ে পড়ে। হাজার হাজার বছরের বিবর্তনের ফলে যে ক্ষমতা অর্জন করেছিল ইনুইটরা, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে উঠেপড়ে লাগেন গবেষকেরা।

০৫ ১৬

নিউ ইয়র্কের একটি গবেষণা সংস্থা ‘আমেরিকান মিউজ়িয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি’ সে সময় রবার্ট পিয়েরির সঙ্গে কয়েক জন ইনুইটকে আমেরিকায় নিয়ে আসার চুক্তি করে। সংস্থাটির উদ্দেশ্য ছিল ইনুইটদের শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা করে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া।

০৬ ১৬

সে কারণে উনিশ শতকে বহু আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের মধ্যে সুমেরু অভিযানের প্রবণতা বাড়তে থাকে। ইনুইটদের নিজের বাসস্থান থেকে তুলে এনে গবেষণার কাজে লাগানোর প্রচেষ্টায় প্রথম সফল হন আমেরিকার নৌসেনার সদস্য রবার্ট পিয়েরি। স্থানীয় ইনুইটদের সাথে রবার্ট পিয়েরির বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি ইনুইটদের ভাষা ও সংস্কৃতি শিখেছিলেন।

০৭ ১৬

নানা ভাবে প্ররোচিত করে কুইসুক নামে এক ইনুইট ও তাঁর ছেলে মিনিক-সহ মোট ছয় জন ইনুইটকে আমেরিকায় নিয়ে আসতে সফল হন রবার্ট। রবার্ট তাঁদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, এক বছর পর তিনি নিজে তাঁদের বাসভূমিতে ফিরিয়ে দিয়ে আসবেন।

০৮ ১৬

১৮৯৭ সালে আমেরিকার ব্রুকলিন শহরে ইনুইটদের নিয়ে রবার্টের জাহাজ এসে পৌঁছয়, তখন হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন তাঁদের দেখার জন্য। এখানেও রবার্ট তাঁর মুনাফার দিকে নজর রাখেন। রীতিমতো টিকিট বিক্রি করে ইনুইটদের প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন তিনি। ২০ হাজার মানুষ টিকিট কেটেছিলেন বলে জানা যায়। এর থেকে মোটা অর্থলাভ হয় রবার্ট পিয়েরির।

০৯ ১৬

ইনুইটদের ‘আমেরিকান মিউজ়িয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি’র কাছে সঁপে দিয়ে রবার্ট পিয়েরি উত্তর মেরু অভিযানে বেরিয়ে পড়েন। আর তার পর থেকেই আমেরিকায় চলে আসা ছয় ইনুইটের দুর্দশার কাহিনি শুরু হয়। তাঁদের রাখা হয়েছিল মাটির তলার একটি ঘরে।

১০ ১৬

গ্রিনল্যান্ডের অত্যধিক ঠান্ডার সঙ্গে আমেরিকার গরমে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি ইনুইটরা। তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কুইসুক-সহ চার জন ইনুইটের মৃত্যু ঘটে। এক জন অসুস্থ ইনুইটকে ১৮৯৯ সালে জাহাজে করে গ্রিনল্যান্ডে রেখে আসা হয়।

১১ ১৬

আমেরিকায় রয়ে যায় কুইসুকের সাত বছরের পুত্র মিনিক। মিনিককে জানানো হয়, তার বাবা ও অন্যান্য ইনুইটের মৃত্যুর পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। বাস্তবে ঘটেছিল তার উল্টো। আমেরিকার ওই মিউজ়িয়ামে মৃত ইনুইটদের শরীরের উপর পরীক্ষা করা হয়েছিল। কুইসুকের মাথা কেটে তা পরীক্ষা করা হয়েছিল যার ছবি ছাপা হয় এক বৈজ্ঞানিক পত্রিকায়।

১২ ১৬

মিনিকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এক আমেরিকান পরিবারকে। তারা মিনিকেরও নামও বদলে দেয়। বড় হওয়ার পর মিনিক তাঁর ও পরিবারের অতীত সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জানতে পারেন। তিনি সবচেয়ে বেশি আঘাত পান যখন জানতে পারেন যে, তাঁর বাবার খুলি ও শরীর তখনও জাদুঘরে রয়েছে।

১৩ ১৬

১৯০৭ সালে মিনিক ‘আমেরিকান মিউজ়িয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি’কে তার বাবার শরীর ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। সেই কথায় কর্ণপাত করেননি কর্তৃপক্ষ। এর পর মিনিক রবার্টকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেন তাঁকে যেন গ্রিনল্যান্ডে ফেরত পাঠানো হয়। রবার্ট পিয়েরিও মিনিখের অনুরোধ প্রত্যাখান করেন।

১৪ ১৬

বাধ্য হয়ে মিনিক সংবাদমাধ্যমের দ্বারস্থ হন। সমস্ত ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর রবার্টের বিরুদ্ধে জনরোষের সৃষ্টি হয়। ইনুইটদের সঙ্গে তিনি যে অন্যায় করেছিলেন তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনার মুখে পড়ে রবার্ট মিনিককে গ্রিনল্যান্ডে নিয়ে যেতে বাধ্য হন।

১৫ ১৬

সেখানে ফিরে গিয়ে ইনুইট সমাজের মূলস্রোতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন মিনিক। কিন্তু বহু দিন আমেরিকায় থাকার ফলে সেখানকার ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলতে বসেছিলেন তিনি।

১৬ ১৬

পরে মিনিক আবার আমেরিকা ফিরে আসেন তাঁর বাবার মৃতদেহ ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রোগে ভুগে তাঁর মৃত্যু হয়। ১৯৯৩ সালে ‘আমেরিকান মিউজ়িয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি’ জনমতের চাপে পড়ে মিনিকের বাবা কুইসুক ও অন্য ইনুইটদের মৃতদেহ গ্রিনল্যান্ড সরকারের হাতে তুলে দেয়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement