সুজাতার মামলা করার দিন, মঙ্গলবার লোকসভার অধিবেশনে ছিলেন সৌমিত্র। ফাইল চিত্র।
আড়াই বছর স্বামী সৌমিত্র খাঁ-র সঙ্গে থাকেন না তিনি। এ বার বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করলেন সুজাতা মণ্ডল। মঙ্গলবার বাঁকুড়া আদালতে আবেদন জানান সুজাতা। তবে সাংসদ স্বামীর বিরুদ্ধে তিনি কোনও অভিযোগ তোলেননি।
আনন্দবাজার অনলাইনকে সুজাতা জানিয়েছেন, সৌমিত্রের সঙ্গে ঐকমত্য হয়েই তিনি বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পরস্পর সম্মত হয়েই মামলা করলাম। আশা করি উনি মেনে নেবেন।’’ খোরপোশের দাবি জানানো প্রসঙ্গে সুজাতা বলেন, ‘‘আমার কোনও দাবি নেই। দাবি যদি করতে হয় তবে তো সাংসদ পদটাই দিয়ে দিতে হয়! কারণ, আমিই তো জিতিয়েছিলাম।’’ সুজাতার মামলা করার দিন, মঙ্গলবার লোকসভার অধিবেশনে ছিলেন সৌমিত্র। একাধিক বার ফোন করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে সৌমিত্রও একটা সময়ে জানিয়েছিলেন, তিনি সুজাতার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ চান। গত জানুয়ারি মাসে তিনি একটি বিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন বাঁকুড়া আদালতে। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি মামলা দায়ের করে সৌমিত্র বলেছিলেন, ‘‘গত দু’বছর ধরে সুজাতার সঙ্গে আমার সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল। আমি গত বছরের জানুয়ারি এবং মার্চ মাসে দু’বার আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলাম। আজ বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করলাম।’’ তবে সেই মামলার কী পরিণতি হয়েছিল তা জানা যায়নি।
সেই সময়ে সুজাতা যে ডিভোর্স চান না সেটাও জানিয়েছিলেন। সৌমিত্রের নোটিস পেয়ে পাল্টা চিঠি দিয়ে সুজাতা জানিয়েছিলেন, বিচ্ছেদ নয়, ঘর করতেই চান তিনি। বলেছিলেন, “আমি কোনও দিনও বিবাহবিচ্ছেদ চাইনি। আজও ডিভোর্সে রাজি নই। সৌমিত্রর থেকে আলাদা হব, এ কথা আজও আমি ভাবতে পারি না।”
বিয়ের দিনের সেই ছবি। ফাইল চিত্র।
সেটা ছিল ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস। এর পরে অনেকটা সময় গিয়েছে। এ সব নিয়ে এখন আর কথা বলতেই রাজি নন সুজাতা। তিনি বলেন, ‘‘আমার কোনও দাবি নেই। ওঁর বাঁকুড়া, কলকাতা এবং দিল্লির বাড়িতে আমার অনেক কিছু রয়ে গিয়েছে। সে সবও চাইব না। ইচ্ছা হলে দেবেন কিংবা দেবেন না।’’ পুরনো কথার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অনেক বছর একসঙ্গে থেকেছি। জীবনের বহু চড়াই-উতরাই আমরা পেরিয়েছি। সব পরিস্থিতিতে ওর পাশে থেকেছি। বিষ্ণুপুরে একা প্রচার করেছি। কিন্তু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেই সৌমিত্র আমাকে পর করে দেয়। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে। তাই বলে কি সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে?”
এটা ঠিক যে, রাজনীতি থেকেই সম্পর্কের ভাঙন প্রকাশ্যে আসে। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর আচমকাই বিজেপি ছেড়ে সৌগত রায় ও কুণাল ঘোষের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন সুজাতা। তার কিছু ক্ষণ পরেই সাংবাদিক বৈঠক করে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন সৌমিত্র। ওই দিন সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন কান্নায় ভেঙেও পড়তে দেখা যায় বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদকে। কাঁদতে কাঁদতেই বলেছিলেন, ‘‘আমি কি খুব পাপী? সুজাতা, খুব ভুল করলে। আর তুমি পদবিতে খাঁ লিখো না। শুধু মণ্ডল লিখো।’’
গত বিধানসভা নির্বাচনে মণ্ডল পদবি নিয়েই আরামবাগ কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে লড়েছিলেন সুজাতা। জিততে পারেননি। কিন্তু এ বার বিবাহবিচ্ছেদ মামলা জিততে চাইছেন। সুজাতার তৃণমূলে যোগ দেওয়া, সৌমিত্রর কেঁদে ফেলা দেখা গিয়েছিল ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর। সুজাতা বিচ্ছেদের মামলা করলেন ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর। ঘটনাচক্রে ঠিক দু’বছরের মাথায়।