মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রে গেলে মুখ্যমন্ত্রী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। দাবি করলেন কুণাল ঘোষ। — ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র মুখ হবেন কে? এ প্রশ্নের জবাব সরাসরি এড়িয়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারও তিনি বলেছেন, ভোটের পরে বিষয়টি নিয়ে কথা হবে। কিন্তু তাঁর দলের অন্যতম মুখপাত্র সে সব শুনলে তো!
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ রবিবার বলেছিলেন, ২০৩৬ সালের পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ, ২০৩৬ সাল পর্যন্ত মমতাই মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। তার পরে অভিষেক হবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতার উত্তরসূরি। আর সোমবার কুণালের দাবি, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিরোধী জোটের মুখ হোন মমতা। তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যাবেন অভিষেক।
মঙ্গলবার বিকেলে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বৈঠক। তার ২৪ ঘন্টচা আগে কুণালের ওই মন্তব্য বিভিন্ন দিক থেকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। অনেকে বলছেন, এটি আসলে জোটের বৈঠকের আগে কংগ্রেসের উপর চাপ তৈরির কৌশল। আবার অনেকের মতে, এটি রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে অভিষেকের অভিষেক ত্বরাণ্বিত করার বার্তা। সোমবার তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল বলেছেন, ‘‘যদি মাঝখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে দিল্লিতে কোনও গুরুদায়িত্ব চলে আসে, তা হলে রাজ্যের দায়িত্ব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নেবেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘যদি দেশ পরিচালনার চ্যালেঞ্জ সামনে আসে, যদি দেশবাসী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চান, তখন তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।’’
কুণাল আরও বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০৩৬ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী হবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-আলোচনার কোনও অবকাশ নেই। কিন্তু এর মাঝে যদি দেশের বৃহত্তর দায়িত্ব পালনের সুযোগ মমতাদির সামনে চলে আসে, তা হলে তা তিনি গ্রহণ করবেন না কেন? সেই সন্ধিক্ষণে মুখ্যমন্ত্রী হবেন অভিষেক।’’ কুণালের ব্যাখ্যা, রাজনীতিক হিসেবে মমতাকে গোটা দেশ চেনে। বিজেপিকে তিনিই লড়াই দিচ্ছেন। প্রশাসক হিসেবেও তাঁকে দেশ চিনে গিয়েছে। তাঁর প্রকল্প পুরষ্কৃত হচ্ছে, অন্য রাজ্যে অন্য দল সেই প্রকল্প নির্বাচনী ইস্তাহারে লিখে ভোট পাচ্ছে।
এই সূত্রে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুকে নিয়ে সিপিএমের নেওয়া ২৭ বছর আগের সিদ্ধান্তেরও উল্লেখ করেন কুণাল। ১৯৯৬ সালে কংগ্রেস বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বসুর নাম উঠলেও তা নাকচ করে দেয় সিপিএম। পরে যাকে দলের ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলেছিলেন স্বয়ং বসু। সেই প্রসঙ্গ টেনে কুণাল বলেন, ‘‘তৃণমূল জ্যোতি বসুর পার্টির মতো ঐতিহাসিক ভুল করবে না।’’
কুণাল ওই কথা বললেও বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র মুখ কে হবেন সে প্রশ্ন বারবার এড়িয়ে গিয়েছেন স্বয়ং মমতা। সোমবারেও তাঁকে ওই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, ওই বিষয়টি ভোটের পরে ঠিক হবে। বস্তুত, এটিই দীর্ঘদিন ধরে মমতার ঘোষিত অবস্থান। সোমবার মমতাকে প্রশ্ন করা হয়, রাহুলের এই বক্তব্য নিয়ে যে, তিনি নিজেকে ‘জোটের মুখ’ বলে তুলে ধরছেন না। শুনে মমতা বলেন, ‘‘ঠিকই তো। উনি তো ঠিকই বলেছেন। জোটের মুখ নিয়ে ভোটের পরে আলোচনা হবে।’’