The Kerala Story

কুণালের ‘ধমক’ শুনে চুপ শুভাপ্রসন্ন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’তে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মমতাকে প্রসন্ন রাখায় মন!

‘দ্য কেরালা স্টোরি’ রাজ্যে নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে বিরোধিতা করেছিলেন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। সেই বিতর্ক নিয়ে বুধবার শিল্পীর কথা কুণালের সঙ্গে। তার পরেই চুপ শুভাপ্রসন্ন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৩ ১৭:৫০
Share:

মঙ্গলে শুরু বিতর্ক বুধে মিটল কি! — ফাইল চিত্র।

বিতর্কিত ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ বাংলায় ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণার পরে রাজ্য সরকারের নিন্দায় বিরোধীদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছিলেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। কিন্তু এ বার তিনি চুপ থাকতে চান। যে সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের ভূমিকা। তাঁর ‘ধমক’ বা পরামর্শেই শুভাপ্রসন্ন আর ওই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Advertisement

ছবিটির প্রদর্শন রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলার পক্ষে ‘বিপজ্জনক’ হতে পারে আশঙ্কা করে ছবিটিকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই ‘তৃণমূল ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত শুভাপ্রসন্ন সরাসরি ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি কোনও শিল্পপ্রচেষ্টার বিরোধিতা পছন্দ করি না। এ ক্ষেত্রে আমি সমর্থন করতে পারছি না। এর ফলে ছবিটা বেশি প্রচার পেয়ে গেল! ভাল বা মন্দ বিচার করার দায়িত্ব মানুষের উপরেই ছাড়া উচিত। সেন্সর বোর্ড যখন ছাড় দিয়েছে, তখন প্রদর্শনে বাধা কোথায়? এই সিদ্ধান্তের পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে কি না জানি না। তবে থাকলেও কোনও সুবিধা মিলবে না বলেই আমার ধারণা।’’

এ নিয়ে মঙ্গলবার কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, বুধবার শিল্পীকে ‘মৃদু ধমক’ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার কুণাল বলেছিলেন, ‘‘উনি রবীন্দ্রনাথের মতো দাড়ি রাখেন। তাই রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন কিছু বলব না। যা বলার বুধবার বলব।’’ এর পরে বুধবার সকালে নিজেই কুণালকে ফোন করেন শুভাপ্রসন্ন। সে কথা জানিয়ে কুণালই বলেন, ‘‘আমায় সকালে শুভা’দা ফোন করেছিলেন। তখন আমি বলি, যাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ রয়েছে আপনি তাঁদের মধ্যে। তা হলে রাজ্য সরকারের একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে এ ভাবে বাইরে মুখ খুলছেন কেন?’’ কুণাল জানান, সেই কথা শুনে তা মেনে নেওয়ার কথাই বলেন শুভাপ্রসন্ন। তা যে ঠিক, তা বোঝা গিয়েছে বুধবার শুভাপ্রসন্নকে ফোন করেই। আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে শিল্পী বলেন, ‘‘কুণাল আমায় ভাল ভাবেই এ নিয়ে আর কিছু বলতে বারণ করেছে। তাই আমি আর মুখ খুলতে চাই না।’’ তিনি কি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন? শুভাপ্রসন্ন জানান, সেটা তিনি পরে ভেবে দেখবেন। তবে নিজের মঙ্গলবারের মন্তব্যে তিনি অনড় থাকবেন কি না, সে ব্যাপারে শুভাপ্রসন্ন কিছু বলতে চাননি। দু’জনেই অবশ্য জানিয়েছেন, অতীতের মতো উত্তেজনা তৈরি হয়নি বুধবারের ফোনালাপে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, এর আগে বাংলা ভাষায় ‘পানি’, ‘দাওয়াত’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে মমতার সঙ্গে সংঘাতের পথে হেঁটেছিলেন শুভাপ্রসন্ন। যার জেরে কুণালের সঙ্গেও শুভাপ্রসন্নের সংঘাত বাধে। যা শেষ পর্যন্ত উত্তপ্ত আলোচনার দিকে গড়ায়। কলকাতায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই শুভাপ্রসন্ন তাঁর ভাষণে বাংলা ভাষায় ‘পানি’ বা ‘দাওয়াত’-এর মতো শব্দের অনুপ্রবেশ নিয়ে তাঁর উদ্বেগ এবং অনুযোগের কথা বলেছিলেন। মঞ্চ থেকে শুভাপ্রসন্নকে ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়েও মমতা বলেছিলেন, তিনি প্রবীণ শিল্পীর সঙ্গে একমত নন। ভাষার প্রবেশেই ভাষার ভান্ডার বৃদ্ধি হয়। তা সত্ত্বেও পর দিন আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে ‘পানি’ ও ‘দাওয়াত’ শব্দ প্রসঙ্গে তাঁর অবস্থানে অনড় ছিলেন শুভাপ্রসন্ন। তিনি এমনও দাবি করেছিলেন যে, মমতার বক্তব্য ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’। তিনিই সঠিক।

তার পরেই সরব হয়েছিলেন কুণাল। মমতার বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক’ বলে প্রমাণ করার চেষ্টার বিরোধিতা করে কুণাল বলেছিলেন, “একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে শুভাপ্রসন্ন একটু বাড়াবাড়ি করছেন। ভাষা দিবসের ঘটনা নিয়ে নতুন করে মমতা’দিকে ভুল প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দলের কারও উচিত ওঁর সঙ্গে কথা বলা।’’ এখানেই না থেমে কুণাল শুভাপ্রসন্নকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘জমি না কমিটির পদ লাগবে, এটা জেনে নিলেই ঝামেলা মিটে যাবে!” যার জবাবে শুভাপ্রসন্ন আবার বলেছিলেন, “যাঁদের নিজেদের নানা রকম চাহিদা বা অভাব, তাঁরাই এমন বলে বেড়ান।”

সেই কথার লড়াইয়ের শেষটা মধুর হয়নি। বিতর্ক থামানোর জন্য শুভাপ্রসন্নের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে যায় যে, তা শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করে গিয়েছিল। কুণাল ‘অপশব্দ’ প্রয়োগ করেন বলেও অভিযোগ ছিল। সেটা কিছুটা মেনে নিয়েই তখন কুণাল বলেছিলেন, ‘‘শুভা’দা আমার চেয়ে বয়সে বড়। উত্তেজনার বশে আমি কিছু কথা বলে ফেলেছি। যেটা হয়তো ঠান্ডা মাথায় বলতাম না। আমার হয়তো সেটা বলা উচিত হয়নি।’’ সেই অভিজ্ঞতার কথা স্বীকার করে শুভাপ্রসন্নও বলেছিলেন, ‘‘কুণাল আমার ভাইয়ের মতো। ও কিছু কথা বলেছিল, যেটা শুনতে ভাল লাগেনি। রেগে গিয়ে বলেছিল হয়তো। তবে পরে সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে।’’

এ বার অবশ্য কুণাল ঠান্ডা মাথাতেই শুভাপ্রসন্নকে চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সেটা কুণাল যেমন জানিয়েছেন তেমনই জানিয়েছেন ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে মৌন শুভাপ্রসন্নও। তিনি বলেন, ‘‘স্বাভাবিক স্বরেই কুণাল আমায় পরামর্শ দেয়। আমি সেটা মেনেও নিয়েছি। আর কোনও বিতর্ক নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement