The Kerala Story

দিদি ছবি দেখে সিদ্ধান্ত নিন, আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত

জলপাইগুড়ির ছেলে বানিয়েছেন ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। মুক্তির আগে থেকেই বিতর্ক আর মুক্তির পরে বাংলায় নিষিদ্ধ। কী বলছেন তিনি? টেলিফোনে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৩ ১১:৩৬
Share:

যখন ‘পদ্মাবত’ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলের আগে সেই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

প্রশ্ন: আপনার ছবি তো বিনোদন জগতের তুলনায় রাজনীতিতে বেশি হইচই ফেলে দিয়েছে...।

Advertisement

সুদীপ্ত সেন: আপনি তো রাজনৈতিক সংবাদদাতা! তাই এ ভাবে বলছেন। কিন্তু আমার সঙ্গে রাজনীতির দূর দূর অবধি কোনও সম্পর্ক নেই। আমি সিনেমা তৈরি করি। এটাই আমার পরিচয়।

প্রশ্ন: আপনি যা-ই বলুন, আপনার ছবি তো এখন গোটাটাই রাজনীতির বিষয়। পশ্চিমঙ্গে আরও বেশি করে।

Advertisement

সুদীপ্ত: আমি তো সেই কারণেই বলেছি, দিদি একবার ছবিটা দেখে নিয়ে মন্তব্য করলে ভাল হত। কারণ, যখন ‘পদ্মাবত’ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলের আগে সেই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমার ছবিটা তো দেখলেনই না! ছবি না দেখেই নিষিদ্ধ করে দেওয়াটা একেবারে বাচ্চাদের মতো, ছেলেখেলার ব্যাপার হল। এই ছবিটার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সবাই ছবিটা দেখছেন। কংগ্রেস এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যেও ছবিটা দেখানো হচ্ছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গে বাদ। তামিলনাড়ুতেও কিন্তু ছবিটা ‘নিষিদ্ধ’ হয়নি। ওখানে প্রদর্শকদের সঙ্গে সমস্যা হচ্ছে।

প্রশ্ন: কলকাতায় কবে আসছেন?

সুদীপ্ত: জানি না। এখনও পর্যন্ত কোনও পরিকল্পনা নেই। এখন লখনউ যাচ্ছি। ছবির প্রোমোশনের জন্য।

প্রশ্ন: কলকাতায় প্রোমোশনের পরিকল্পনা ছিল?

সুদীপ্ত: কলকাতায় একটা সাংবাদিক বৈঠক করার কথা ছিল। আমরা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছি। দেখা যাক কী হয়। তার পরে কলকাতায় যাওয়ার ব্যাপারটা ঠিক করব।

প্রশ্ন: আপনার ছবি নিয়ে বিতর্ক প্রচুর। কিন্তু ছবির বাণিজ্যিক সাফল্য কতটা?

সুদীপ্ত: কালকেই বক্স অফিসে ৬০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। এটাকে তো ‘বেনজির ব্লকবাস্টার’ বলা হয়েছে। যাঁরা এটাকে ‘প্রোপাগান্ডা ফিল্ম’ বলছেন, তাঁদের কাছে এটাই তো উত্তর। ওই যাঁরা বলছেন বিজেপি, আরএসএস-এর সমর্থনে ছবি হয়েছে। বিজেপি, আরএসএস-এর ছবি ছিল নরেন্দ্র মোদীর বায়োপিক। এখন কেউ মনেই করতে পারে না সেই ছবিটা ছিল কি না। আমরা যে ধরনের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি, সেটা নজিরবিহীন। সব ধর্মের মানুষ ছবিটা দেখছেন। আমার কাছে প্রচুর এ রকম তথ্য রয়েছে, যেখানে মুসলিমরা আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। এটা এখন রাজনৈতিক আন্দোলন হয়ে গিয়েছে। আসলে এই বিষয়টা নিয়ে আগে কখনও কথা বলা হয়নি তো। তাই এত গুরুত্ব পাচ্ছে।

বিজেপি ভাল করে বিষয়টা হাতে নিয়ে নিয়েছে। তবে রাজস্থানে, ছত্তীসগড়েও ছবিটা দারুণ ভাবে চলছে। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: আপনিই মোদীর কথা বললেন। প্রধানমন্ত্রী যখন কর্নাটকে ভোটের প্রচারে গিয়ে আপনার ছবির প্রশংসা করলেন তখন থেকেই কি রাজনীতিটা বেশি করে এসে গেল?

সুদীপ্ত: নরেন্দ্র মোদী বলার আগেই মামলা তো হয়েই গিয়েছিল। তবুও একটু তো রাজনৈতিক হলই। তবে তার জন্য আমাদের খুব বেশি পার্থক্য হয়নি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী বলার আগেই তিনটে মামলা সুপ্রিম কোর্টে, একটা তামিলনাড়ু হাই কোর্টে, ১১টা কেরল হাই কোর্টে।

প্রশ্ন: শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাও আপনার ছবির প্রশংসা করলেন।

সুদীপ্ত: সেটাই তো বলছি। বিজেপি ভাল করে বিষয়টা হাতে নিয়ে নিয়েছে। তবে রাজস্থানে, ছত্তীসগড়েও ছবিটা দারুণ ভাবে চলছে। সেখানে তো আর বিজেপি সরকার নেই!

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি তো ইতিমধ্যেই দলীয় দফতরে এই ছবি প্রদর্শনের ঘোষণা করেছে।

সুদীপ্ত: এটা তো এখন পুরোপুরি রাজনৈতিক ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। তবে ওরা ছবি দেখাবে কী করে? আমি বিষয়টা জানি না। ছবির প্রিন্ট তো আর পশ্চিমবঙ্গে নেই। আমি একটু প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছি (পাশেই ছিলেন প্রযোজক বিপুল আম্রুতলাল শাহ। তাঁর সঙ্গে মিনিটখানেক কথা বললেন সুদীপ্ত)।

প্রশ্ন: কী বললেন প্রযোজক? বিজেপি কী ভাবে দেখাবে?

সুদীপ্ত: কলকাতায় আমাদের যে ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছেন, তিনি প্রিন্ট দিয়ে থাকতে পারেন। আমাদের বিষয়টা জানা নেই। আমার বা আমার প্রযোজকের কাছে এমন কোনও খবর নেই।

প্রশ্ন: বাঙালি হয়ে কেরলের এই ধরনের ঘটনা নিয়ে ছবি তৈরির প্রেরণা কোথায় পেলেন?

সুদীপ্ত: বাঙালি হলেও ২০০৯ সালে প্রথম মালয়ালম ভাষায় একটি বাণিজ্যিক ছবি বানিয়েছিলাম। তখন থেকেই কেরলে যাওয়া-আসা। যখন এই বিষয়টা জানতে পারলাম তখন থেকেই গবেষণা শুরু করি। ২০১৮ সালে একটা তথ্যচিত্র বানাই। তার পরে এই ছবি।

প্রশ্ন: আপনাদের ছবির ট্রেলার নিয়েও তো কম বিতর্ক হয়নি। প্রথমে দাবি করা হয়, ৩২ হাজার মেয়ের কাহিনি। পরে সেটা কমে তিনটি মেয়ে হয়ে যায় কেন?

সুদীপ্ত: এর পিছনেও একটা চক্রান্ত ছিল। ট্রেলার প্রকাশ পাওয়ার পরে পরেই আমাদের ইউটিউব চ্যানেল হ্যাক হয়ে যায়। তখনই কেউ ৩২ হাজারকে কমিয়ে তিন করে দেয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমরা জানতে পেরে সব ঠিক করে দিই। কিন্তু তত ক্ষণে অনেক স্ক্রিনশট সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এখনও ছবিতে ৩২ হাজার মেয়ের কথাই রয়েছে। আমরা বলেছি, ৫০ হাজারের বেশি মেয়ের উপরে এই চক্রান্ত হয়েছিল। তবে সংখ্যাটা এখানে বড় কথা নয়। এক জনের উপরে হলেও বিষয়টার গুরুত্ব একই থাকে। তাতেও আমরা ছবিটা করতাম।

প্রশ্ন: রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আপনারা মামলা করছেন। ব্যক্তিগত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন না?

সুদীপ্ত: সেটা তো আমি বলেইছি। উনি তো শিল্পের স্বাধীনতার বিষয়ে চ্যাম্পিয়ন। সব সময়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন। কিন্তু আমাদের ছবিটা নিয়ে কেন ওঁর এমন মনোভাব হল এবং ছবিটা না দেখেই, সেটা তো আমি বলতেই পারব না। আমি ওঁকে অনুরোধ করতে পারি যে, ছবিটা দেখে তার পরে সিদ্ধান্ত নিন। একটা মানুষ তো এতটা হিপোক্রিট হতে পারেন না, তাই না? কখনও উনি বলছেন, শিল্পের স্বাধীনতা থাকা উচিত। কোনও ছবি নিষিদ্ধ করা ঠিক নয়। সেটা সংস্কৃতিবিরোধী। আবার নিজেই একটা ছবি নিষিদ্ধ করে দিচ্ছেন! দু’রকমের কথা বলছেন। আমার তো মনে হয় সেটা এক ধরনের হিপোক্রিসি।

প্রশ্ন: বিজেপি কি এই ছবি থেকে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে পারবে?

সুদীপ্ত: আমরা তো রাজনীতির কথাটা বুঝতে পারব না। আপনি ছবিটা দেখলে বুঝতে পারবেন, ছবিটা খুবই মানবিক এবং বেদনাদায়ক ঘটনা নিয়ে তৈরি। ছবিটা তৈরির সময়ে আমি রাজনীতি নিয়ে কিছুই ভাবিনি।

প্রশ্ন: কিন্তু বিজেপি বা আরএসএস তো এই বিষয়টা নিয়ে অনেক দিন ধরেই সরব। তাই কি বিষয়টা লুফে নিয়েছে?

সুদীপ্ত: অনেক সামাজিক সংগঠন এই বিষয়ে কাজ করছে। যে মেয়েগুলি ধর্মান্তরের পরে সিরিয়ায় পাচার হওয়ার অবস্থায় ছিল, তারাও অনেক দিন ধরে কাজ করছে। যাঁরা ধর্মান্তরের শিকার হয়েছেন, তাঁদের নিয়ে বেশ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। তারা আমার ছবিতে অনেক তথ্যও দিয়েছে।

প্রশ্ন: বিজেপি বলছে, এই ছবিটা নিষিদ্ধ করা মানে ‘জেহাদিদের কাছে আত্মসমর্পণ’। আপনিও কি তেমনই মনে করেন?

সুদীপ্ত: একদম ঠিক কথা! আমিও তাই মনে করি। আমার ছবিতে আমি ১১ বার আইসিসের কথা বলেছি। কেউ যদি ছবিটা বন্ধ করতে চায়, তবে সেটা হতে পারে আইসিস। তারা চাইতে পারে যে, ছবিটা না হোক। কারণ, তা হলে তাদের কাণ্ড সবাই জেনে যাবে। সুতরাং, যাঁরা এই ছবি বন্ধ করতে চান তাঁরা তো আইসিসের ভাষায় কথা বলছেন! আমার তো মনে হয়, দিদিকে কেউ ভুল বুঝিয়েছে। বাঙালি ছেলে একটা ছবি বানিয়েছে, আর সেটা না দেখেই বন্ধ করে দেব! এটা হয় নাকি কখনও? উনি তো আমাদের অভিভাবক। ওঁর পছন্দ না হলে উনি আমাকে ডাকুন। আমি কথা বলি ওঁর সঙ্গে, ওঁর মত শুনি। দরকার হলে ‘সরি’ বলব ওঁকে। কিন্তু ছবিটা তো দেখা উচিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement