বাবুলের বিরুদ্ধে সিবিআই কোনও অভিযোগ না তুললেও তাঁর নাম চলে আসছেই। কারণ, সুশান্ত মল্লিক বাবুলের প্রাক্তন আপ্তসহায়ক হিসেবেই পরিচিত। যদিও বাবুল-ঘনিষ্ঠরা বলছেন, অতীতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন বিহারের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গেও কাজ করেছেন সুশান্ত। পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়া প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি এবং দীপা দাসমুন্সিরও আপ্তসহায়ক ছিলেন সুশান্ত।
অস্বস্তির পর অস্বস্তি। ফাইল চিত্র
নির্বাচনে জিতে গেলেও খাতায়কলমে এখনও বিধায়ক হতে পারেননি। তৃণমূলের অভিযোগ অনুযায়ী, বিধায়ক পদে বাবুল সুপ্রিয়ের শপথ আটকে রয়েছে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের ‘রচিত’ জটিলতায়। সেই টানাপড়েনের মধ্যেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুলের প্রাক্তন আপ্তসহায়ক সুশান্ত মল্লিকের নাম জড়িয়ে গেল টেন্ডার দুর্নীতিতে। সোমবারই প্রকাশ্যে এসেছে সুশান্তের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের অভিযোগ। প্রাক্তন আপ্তসহায়কের সঙ্গে ইদানীং আর তাঁর যোগাযোগ নেই বলেই সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন বাবুল। পাশাপাশি বলেছেন, ‘‘জানতাম, এটা করা হবে।’’ কিন্তু তবু সম্ভবত ‘অস্বস্তি’ থেকেই যাচ্ছে তাঁর। যেমন রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ থেকে ভোটে জিতেও ‘বিধায়ক’ হতে না-পারার অস্বস্তি।
রবীন্দ্রসঙ্গীত-প্রিয় বাবুলের কাছে পঁচিশে বৈশাখ দিনটা আলাদা হওয়ার কথা। কেন্দ্রের মন্ত্রী থাকার সময় এই দিনে কোনও না কোনও অনুষ্ঠানে দেখা যেত তাঁকে। কখনও কখনও রবীন্দ্রনাথের গানও গেয়েছেন কবি-জয়ন্তীতে। কিন্তু এ বার কবির জন্মদিনের সকাল থেকেই বাবুল খবরে সম্পূর্ণ দুই অন্য কারণে। রাজ্যপাল নানা ভাবে শপথে বাধা তৈরি করছেন বলে আগেই অভিযোগ তুলেছেন বাবুল। তুলেছে তাঁর দল তৃণমূলও। বস্তুত, মাঝখানে ধনখড়কে উদ্দেশ্য করে বাবুল একটি টুইটও করেছিলেন। তাতে তাঁর ‘সুর নরম’ বলে একাংশের ব্যাখ্যা ছিল। যদিও তৃণমূলের অন্য একাংশ বলেছিলেন, বাবুল মোটেই সুর নরম করেননি। শুধু বিনীত ভাবে রাজ্যপালকে তাঁর দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি যে রাজ্যপালের হাতেই, তা স্পষ্ট। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার সকালে রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে বাবুলের শপথ বিতর্ক নিয়ে বলেন, ‘‘এই বিষয়টা তো আমার হাতে নেই। এই বিষয়টি মহামহিম রাজ্যপালের হাতে। পরিষদীয় দফতরের হাতে। আমি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’
শপথ-জটিলতা নিয়ে ধনখড়-বাবুলের মধ্যে টানা টুইট-যুদ্ধও চলেছে। অনেকে মনে করছেন, বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা বাবুলকে ‘অপছন্দ’ রাজ্যপালের। অন্য দিকে, রাজভবনের দাবি, নিয়ম মেনেই ধনখড় শপথের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত ১৬ এপ্রিল বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে জেতা বাবুলের শপথ সংক্রান্ত নির্দেশটি ধনখড় দেন ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায়। রাজ্যপাল জানান, ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বাবুলকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। কিন্তু তার পর তৈরি হয় নতুন জটিলতা। তিনি শপথ পাঠ করালে ‘স্পিকারের অপমান হবে’ দাবি করে বাবুলকে শপথবাক্য পাঠ করাতে তাঁর অপারগতার কথা জানিয়ে দেন আশিস। ফলে এখনও বিধানসভায় যাওয়ার ছাড়পত্র পাননি বাবুল। কবে পাবেন তা এখনও অনিশ্চিত। স্পিকার অবশ্য সোমবার বলেছেন, ‘‘রাজ্যপাল নিজেই তো শপথগ্রহণ করাতে পারেন! বলার তো কিছুই নেই। বিধানসভায় আসবেন। এসে শপথগ্রহণ করিয়ে যাবেন। এত বিতর্ক বাড়ানোর কোনও অবকাশ নেই। কাউকে পছন্দ হতেই পারে। আবার কাউকে পছন্দ না-ও হতে পারে। তার জন্য কারও শপথগ্রহণ আটকে যাবে, সেটা বাঞ্ছনীয় নয়।’’
শপথ নিয়ে বাবুলের ‘অস্বস্তি’ গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছে। সোমবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে সুশান্ত সংক্রান্ত অস্বস্তি। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না উঠলেও বাবুলের নাম ওই ঘটনায় চলে আসছেই। কারণ, সুশান্ত মূলত বাবুলের প্রাক্তন আপ্তসহায়ক হিসেবেই পরিচিত। যদিও বাবুল-ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, অতীতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গেও কাজ করেছেন সুশান্ত। পরে এই রাজ্য থেকে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি এবং দীপা দাসমুন্সিরও আপ্তসহায়ক ছিলেন সুশান্ত। কয়েক বছর আগের ঘটনা হলেও বিষয়টা যে বাবুলের কাছে স্বস্তিজনক নয়, তা সোমবার সংবাদমাধ্যমে বাবুলের বক্তব্যে খানিকটা স্পষ্ট। তাঁর কথায়, ‘‘এটা আমার কোনও বিষয় নয়। কিন্তু আমার নামটা জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। নথিপত্র দেখলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ একই সঙ্গে বাবুলের অভিযোগ, বাংলার এক বিজেপি নেতা নাকি দিল্লিতে গিয়ে তাঁর নাম ওই মামলায় জুড়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলের ‘হাতেপায়ে ধরেছেন’।