জয়ন্তীকে (বাঁ দিকে) চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা চেয়েছিলেন চুনিয়া (ডান দিকে) বলে অভিযোগ।
রাজ্যে শিক্ষকের পর এ বার আশাকর্মী নিয়োগ নিয়ে উঠল দুর্নীতির অভিযোগ। সম্প্রতি মালদহে একটি অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। সেই অডিয়োতে শোনা গিয়েছে, তৃণমূলের তফসিলি জনজাতি মোর্চার সভাপতি আশাকর্মীর চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে এক মহিলার স্বামীর কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা দাবি করছেন। আনন্দবাজার অনলাইন যদিও সেই অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি। ওই অডিয়ো প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে তৃণমূল। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী দাবি করেছেন, ওই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করা হয়নি। অন্য দিকে বিজেপির খোঁচা, রাজ্যের মানুষ ইতিমধ্যেই চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে তোলাবাজির টাকার পাহাড় দেখেছেন।
সম্প্রতি আশাকর্মী নিয়োগের জন্য মালদহ জেলা জুড়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। মালদহের হবিবপুরের পলাশ বোনা এলাকার বাসিন্দা ললিত মাহাতোর অভিযোগ, তাঁর স্ত্রী জয়ন্তী মুর্মু আশাকর্মী পদের জন্য আবেদন করেন। তাঁর কথায়, ‘‘মৌখিক পরীক্ষার আগেই আশাকর্মী হিসাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে আমার কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা দাবি করেন মালদহ জেলা এসটি মোর্চার সভাপতি চুনিয়া মুর্মু।’’ সেই কথোপকথন তিনি রেকর্ড করেন বলেও দাবি করেন ললিত। তাঁর কথায়, ‘‘চুনিয়া বলেন, আপনার চাকরি কনফার্ম করে দেব, দেড় লক্ষ টাকা দিতে হবে। দিতে পারিনি। নম্বর বেশি থাকা সত্ত্বেও চাকরি হয়নি। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে বলেছি। কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে বলেছি। ব্লক সভাপতি প্রদীপ বাসকে বলেছি। প্রাক্তন ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল মিশ্রকেও বলা হয়েছে। চরম দুর্নীতি হয়েছে। সাধারণ শিক্ষিত সমাজ মাথা উঁচু করতে দাঁড়াতে পারবে না।’’ ললিত আরও বলেন, ‘‘তিন জন প্রার্থীর মধ্যে আমার স্ত্রীর নম্বর সব থেকে বেশি ছিল। নম্বর বেশি থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাননি তিনি।’’
একই দাবি করেছেন ললিতের স্ত্রী জয়ন্তী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘৩৬৩ নম্বর পেয়েছিলাম। তা-ও চাকরি হয়নি। ২৩২ নম্বর পেয়ে অন্য প্রার্থীর চাকরি হয়ে গিয়েছে। টাকার জন্য আমার হল না। চুনিয়া মুর্মু সেই টাকা চেয়েছিলেন।’’
অভিযুক্ত চুনিয়া অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এ রকম কোনও ঘটনা হয়নি। ভিত্তিহীন অভিযোগ।’’
তৃণমূলে সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘অডিয়োর ওই বক্তব্য চুনিয়া মুর্মুর কি না, তা এখনও পরীক্ষা করা হয়নি। তবে যদি সত্যিই তিনি এ সব বলেন, তা হলে দল ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। দলীয় পদে থাকবেন আর দলের মর্যাদা নষ্ট করবেন, এই দু’টি বিষয় এক সঙ্গে হতে পারে না।’’
এ প্রসঙ্গে বিজেপির দক্ষিণ মালদহ সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি বলেন, ‘‘তৃণমূল চাকরি দেওয়ার একটা সংস্থা খুলেছে। তৃণমূলের মন্ত্রীদের নির্দেশে অনেকে টাকা তোলার কাজ করছেন। কিছু জন টাকা দিয়েছেন, তা-ও চাকরি পাননি। বাংলার মানুষ চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে টাকা তুলে তৈরি পাহাড় দেখেছেন, সেই নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। পুরো তৃণমূল দলটাই পচে গিয়েছে।’’