(বাঁ দিক থেকে) শুভেন্দু অধিকারী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিশির অধিকারী। — ফাইল চিত্র।
চণ্ডীপুর থেকে ২০ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে নন্দীগ্রামে সভাস্থলে যখন পৌঁছলেন তখন রাত সাড়ে ১০টা। সেখান থেকেই স্থানীয় বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘গদ্দার পারবে ২০ কিলোমিটার হাঁটতে? পারবে রাত সাড়ে ১০টায় এমন সভা করতে?’’ পাশাপাশি, অভিষেক জানিয়ে গেলেন আবার ৩ মাস পর তিনি নন্দীগ্রামে সভা করতে আসবেন। যদিও এই পুরো পর্বে শুভেন্দুর বাবা সাংসদ শিশির অধিকারীকে ‘ছাড়’ দিয়েছেন অভিষেক। শিশিরকে উদ্দেশ্য করে সভাস্থল থেকে কটূক্তি ভেসে আসতেই বাধা দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
বৃহস্পতিবার নবজোয়ার যাত্রা নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বৃহস্পতিবার বিকেলে চণ্ডীপুর থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে জনসংযোগ শুরু করেন। যাত্রাপথে কখনও রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে বসে চা পান করতে করতে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন, কখনও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছেন। কখনও তাঁকে দেখা গিয়েছে স্থানীয় কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায়। শেষ পর্যন্ত তিনি যখন গন্তব্যে পৌঁছলেন তখন ঘড়ির কাঁটায় ১০টা ২০ মিনিট। এর পর নাতিদীর্ঘ বক্তৃতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুভেন্দুকেই নিশানা করে গিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘ওদের কাছে ইডি, সিবিআই আছে। মোদীজি, শাহজি আছেন (শুভেন্দু এ ভাবেই সম্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে)। কিন্তু মানুষ ওদের সঙ্গে নেই। আর তৃণমূলের ওসব কিছু নেই। কিন্তু মানুষ সঙ্গে আছে। তাই রাত সাড়ে ১০টার সময়ও এমন ভিড়।’’ অভিষেকের সংযোজন, ‘‘এত রাতে এত মানুষ আমাকে দেখতে আসেননি। আসলে নন্দীগ্রামের মাটি থেকে গদ্দারকে উৎখাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মানুষ।’’
নন্দীগ্রামের বিধায়ককে আক্রমণ করে যখন একের পর এক কথা বলছেন অভিষেক, ঠিক সেই সময় শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে ‘চোর-চোর-চোরটা’ স্লোগান শুরু করেন কর্মীরা। যদিও হাত নেড়ে তাঁদের থামতে বলেন অভিষেক। এর পর তিনি বলেন, ‘‘তাঁর জন্য তাঁর বাবাকে কেন বদনাম করছেন? উনি বয়স্ক লোক। নিজের পিঠ বাঁচাতে উনি বিজেপিতে গিয়েছেন।’’ এর পর নাম না করে আবার শুভেন্দুকে নিশানা করে অভিষেক বলেন, ‘‘প্রতি মাসে বলে ভাইপো উঠবে। গ্রেফতার হবে। আরে আমার শরীরে বেইমানের রক্ত নেই। আমার গলা কাটলেও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বেরোবে। ক্ষমতা থাকলে আমায় গ্রেফতার করুক ইডি-সিবিআই।’’ তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপির রাজনীতি মানেই প্রতিহিংসা এবং কুৎসা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলকে দিয়ে বিরোধীদের হেনস্থা করার কৌশল নেয় বিজেপি। কিন্তু মানুষ তার জবাব দেবে। আবারও শুভেন্দুকে আক্রমণে ফিরে গিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘যত কুৎসা করবি, তত গর্তে ঢুকবি। দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মতো ফুলবি। ওর মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খালি বেইমানি। আর মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। এই সিবিআই, এই ইডিই ওকে জেলে ঢোকাবে। কারণ, সব সময় বিজেপি ক্ষমতায় থাকবে না।’’
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচি নিয়ে জেলায় জেলায় মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছেন অভিষেক। জনতার দুয়ারে গিয়ে তাঁদের দাবিদাওয়া, সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনছেন। বুধবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর শহর কাঁথিতে পদযাত্রার পর বৃহস্পতিবার বিরোধী দলনেতার বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামে পৌঁছে যান। রাতে সেখানেই থাকবেন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ভরকেন্দ্র ছিল নন্দীগ্রাম। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি প্রার্থী করে তৃণমূলত্যাগী শুভেন্দুকে। শেষ পর্যন্ত ওই লড়াইয়ে জয়ী হন শুভেন্দু। তাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে নন্দীগ্রামে অভিষেকের এই জনসংযোগ যাত্রার আলাদা রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল। সেই নন্দীগ্রাম থেকে অভিষেকের ঘোষণা, ‘‘এই পবিত্র ভূমিতে দাঁড়িয়ে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, এই মাটিকে আমি সমস্ত বিভাজনকারী শক্তি থেকে মুক্ত করবই। রাত গড়িয়ে গেলেও হাজার হাজার মানুষের যে জমায়েত আমি দেখলাম, তাতে কোনও সন্দেহ নেই, নন্দীগ্রামের আবেগ আজও আমাদের সঙ্গে আছে।’’ শেষে অভিষেকের মন্তব্য, “টিজার দেখিয়ে গেলাম। ছবি তিন মাস পর। পিকচার তো অভি বাকি হ্যায়।”