Mamata Bandyopadhyay

দলের অন্দরে গোষ্ঠীলড়াই নিয়ে আবার সতর্কবাণী শোনালেন মমতা

বুধবার দলের সাংগঠনিক নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন মমতা। তার পর মঞ্চে বক্তৃতা দিতে উঠে টেনে আনেন দলের ‘দ্বন্দ্ব’ প্রসঙ্গ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:৪২
Share:

সতর্কবাণী শোনালেন মমতা

তৃণমূলের ভিতরে আলাদা কোনও গোষ্ঠী নেই। দল একটাই। গ্রুপও একটাই। বুধবার দলের সাংগঠনিক নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারপার্সন পদে পুনর্নির্বাচিত হয়ে কর্মীদের স্পষ্ট বার্তা দিলেন সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সর্বময় নেত্রীর কথায়, ‘‘নেতা জন্মায় না। নেতা তৈরি হতে হয়।’’ অর্থাৎ, নেতাকে একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে তৈরি হতে হয়। কেউ জন্মেই নেতা হয় না।

Advertisement

বুধবার দুপুরে দলের সাংগঠনিক নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন মমতা। জয়ের পর মঞ্চে বক্তৃতা দিতে উঠে নানা প্রসঙ্গের মাঝে মমতা টেনে আনেন দলের ‘দ্বন্দ্ব’ প্রসঙ্গ। মমতা বলেন, ‘‘আপনারা আমাকে কথা দিন, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব করবেন না। তৃণমূল একটাই দল। এখানে দলই শেষ কথা।’’ আরও একধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দল একটাই— তৃণমূল। চিহ্ন একটাই— জোড়াফুল। মাথায় থাকবে তো?’’ সমবেত জনতা সম্মতি দেয়।

সম্প্রতি শাসক তৃণমূলের অন্দরে নবীন প্রজন্ম এবং প্রবীণদের উপস্থিতি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যার শুরু হয়েছিল দলে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি প্রণয়ন করতে গিয়ে। কলকাতার পুরভোটের আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরে বিতর্ক চলছিল। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে তা কেউই স্বীকার করেননি। বস্তুত, সমস্ত স্তরের নেতাই বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

Advertisement

কিন্তু তার পর রাজ্যে ওমিক্রন পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলা চলাকালীন আবার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসে পড়ে। একদিকে যখন মমতা কোভিডবিধি মেনে মেলা চালু রাখার কথা বলছেন, তখনই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে জানান, অতিমারি পরিস্থিতিতে যে কোনও ধরনের জমায়েতই বন্ধ রাখা উচিত। যদিও অভিষেক বিষয়টিকে তাঁর ‘ব্যক্তিগত মত’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। অভিষেকের ওই মন্তব্যে সমর্থন জানায় চিকিৎসকদের একটি অংশ। পরে দলেরই পুরনো নেতা এবং শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে অভিষেকের বিরোধিতা করেন। বস্তুত, কল্যাণ বলেন, মমতা ছাড়া তিনি কাউকে নেতা বলে মানেন না। এমনও বলেন যে, অভিষেক আগে গোয়া এবং ত্রিপুরা জিতে দেখান‘ তা হলে তিনি অভিষেককে নেতা বলে মেনে নেবেন। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যেই দ্বন্দ্ব শুরু হয় দলের প্রবীণ এবং নবীন প্রজন্মের মধ্যে। শুরু হয় দলের সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তন সাংসদ ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সঙ্গে কল্যাণের বিতন্ডা।

শেষপর্যন্ত মমতা দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেন মধ্যস্থতার। পার্থ বিবদমান দুই গোষ্টীর সঙ্গেই কথা বলেন। দু’পক্ষকেই নির্দেশ দেওয়া হয় প্রকাশ্যে বিবৃতি না-দিতে। সেই মতোই কুণাল এবং কল্যাণ নীরব থাকেন। ফলে বিষয়টি আর এগোয়নি।

তবে মমতা পুরো বিষয়টি সম্পর্কেই পুরোপুরি অবহিত ছিলেন। দলের অন্দরে এক বৈঠকে তিনি এ-ও স্পষ্ট করে দেন যে, কোনও রকমের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব রাখা চলবে না। ঘটনাচক্রে, দলের সর্বময় কর্ত্রী পদে পুনর্নির্বাচিত হয়ে তিনি এ বার প্রকাশ্যেই সেই সতর্কবাণী শুনিয়ে রাখলেন। মমতার কথায়, ‘‘দলের কোনও গ্রুপ নেই। একটাই গ্রুপ! তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল এখন জাতীয় দল। কেউ নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব করবেন না। আমাকে কথা দিতে হবে, কেউ নিজেদের মধ্যে লড়াই করবেন না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement