সন্দেশখালিতে দুই বিজেপি কর্মীকে খুনের প্রতিবাদে বসিরহাটে রেল অবরোধে এক দলীয় কর্মী। সোমবার ভ্যাবলা স্টেশনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
বিরোধীদের ডাকা বন্ধে নজিরবিহীন চিত্র দেখল বসিরহাট শহর।
বিরোধীরা বন্ধ ডাকলে সচরাচর তৃণমূলের দাপাদাপিই বেশি দেখা গিয়েছে গত কয়েক বছরে। কখনও পুলিশ আসার আগেই অবরোধকারীদের হটিয়ে দিয়েছেন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা। কখনও বন্ধের সমর্থনে করা মিছিলের থেকেও বড় মিছিল বেরিয়েছে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার ডাক দিয়ে।
সন্দেশখালিতে দুই বিজেপি কর্মীকে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার বসিরহাট মহকুমায় যে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছিল বিজেপি, তা রুখতে অবশ্য শাসক দলের কোনও নেতা-কর্মীকে চোখে পড়েনি সোমবার। ফলে সকাল থেকে কখনও রেল অবরোধ করেছেন বিজেপি কর্মীরা। কখনও মিছিল করেছেন। কিন্তু পাল্টা মিছিল বের হয়নি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বন্ধ-ধর্মঘটের বিরুদ্ধে বার বার সরব হয়েছেন, তখন বসিরহাটে বন্ধ রুখতে কেন সক্রিয় হল না তৃণমূল শিবির?
দলের নেতা ফিরোজ কামাল গাজির যুক্তি, ‘‘তিনজনের মৃত্যুর পরে এই বন্ধে একটা আবেগ কাজ করেছে। সব দলের কর্মী-সমর্থকেরাই শোকাহত। তাই বন্ধের বিরোধিতা করে গন্ডগোলের পথে যাওয়া হয়নি।’’
শাসক দলের পক্ষে এই যুক্তি দেওয়া হলেও তাদের অবস্থান নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। বিজেপির উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি গণেশ ঘোষ বলেন, ‘‘খুনোখুনির রাজনীতি করছে তৃণমূল। মানুষ এটা ভাল চোখে দেখছেন না, তা বুঝতে পেরে ওরা ব্যাকফুটে।’’ সিপিএম নেতা শ্রীদীপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা কখনও গণতান্ত্রিক প্রয়োজনে বন্ধ ডাকলে ঠেঙিয়ে তুলে দিয়েছে তৃণমূল। এখন বুঝতে পারছে, ওদের দিক থেকে হাওয়া ঘুরতে শুরু করেছে। তাই রাস্তায় নেমে বন্ধের বিরোধিতা করার সাহস দেখায়নি।’’
তবে বসিরহাট শহরের বাইরে দু’একটি জায়গায় অবশ্য তৃণমূলের তরফে বন্ধ তোলার চেষ্টা যে হয়নি, তা নয়। হিঙ্গলগঞ্জে বন্ধের সমর্থনে মিছিল চলাকালীন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বচসা বাধে। হাসনাবাদে এক জায়গায় বন্ধের বিরোধিতায় পথে নেমেছিল তৃণমূল। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয়। একটি ব্যাঙ্কের শাখা অফিস খোলার সাহস পাচ্ছিলেন না সহকারী ম্যানেজার। তাঁকে ও নিরাপত্তারক্ষীদের তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। যদিও ব্যাঙ্ক শেষ পর্যন্ত খোলা হয়নি।
এই ঘটনাগুলি বাদ দিলে মহকুমার প্রায় সব এলাকাতেই ভোর থেকে দাপিয়ে বেরিয়েছে বিজেপি। সকাল ৭টা নাগাদ ভ্যাবলা স্টেশনে অবরোধ হয়। ঘণ্টা দু’য়েক পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। টাকি, হাসনাবাদেও দফায় দফায় ট্রেন অবরোধ হয়েছে। বেলা
বাড়তেই দেখা যায়, বাইকে চড়ে দলীয় পতাকা হাতে বিজেপি কর্মীরা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন। রাস্তায় গাড়ি তেমন চোখে পড়েনি। দোকানপাট অধিকাংশই বন্ধ ছিল। সরকারি-বেসরকারি অফিস হয় বন্ধ ছিল, না হলে কর্মী-সংখ্যা ছিল নামমাত্র। টাকি, হাসনাবাদ এবং ভেবিয়া চৌমাথা যাওয়ার রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থকেরা। তবে পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হয়েছে এ দিন। ‘পরীক্ষার্থী’ লেখা পোস্টার সাঁটানো অটো-টোটো-ভ্যান চোখে পড়েছে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।