সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে নেতাজি জয়ন্তী কমিটির ‘দেশপ্রেম দিবস’ অনুষ্ঠানে বাম নেতারা। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে রেড রোডে নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠান ঘিরে সংঘাত বেধেছিল। তার পর থেকে ওই অনুষ্ঠানে আর যান না বাম নেতারা, বাম দলগুলিকে আমন্ত্রণও করা হয় না। তবে এ বার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালনের বাম অনুষ্ঠানে দেখা গেল কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের। কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির বিরুদ্ধে এক সুরে সরব হওয়ার পাশাপাশি তৃণমূল প্রতিনিধিদের সামনেই বাম নেতারা রাজ্যে ‘দেশপ্রেম দিবস’ পালন না হওয়ার সমালোচনাও করেছেন।
নেতাজি জয়ন্তী কমিটির আহ্বানে রবিবার সীমিত লোক নিয়ে অনুষ্ঠান ছিল রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে। সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, আরএসপি-র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত বিশ্বাস, বরুণ মুখোপাধ্যায়, নরেন চট্টোপাধ্যায়েরাও। সেখানেই আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায়। কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যও সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে নেতাজির মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানান। অ-বিজেপি সব দলের নেতাদেরই মূল বক্তব্য, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজির ভূমিকার অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর বহুত্ববাদের ধারণা। আজাদ হিন্দ বাহিনীর রেজিমেন্ট গঠনেও সেই ভাবনা স্পষ্ট। এখন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিভাজনের রাজনীতি করছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে নেতাজির অর্থনৈতিক ভাবনাকেও ভূ-লুণ্ঠিত করছে। আবার অন্য হাতে তারাই নেতাজির মূর্তি বসানো এবং আরও নানা ঘোষণার ‘চমক’ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের জন্য নেতাজির উপরে প্রস্তাবিত রাজ্যের ট্যাবলো যে ভাবে বাতিল হয়েছে, তার প্রতিবাদ করেছেন নির্বেদবাবু, বিমানবাবুরা। এরই পাশাপাশি বাম নেতাদের প্রশ্ন, রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার সরকারি ভাবে ‘দেশপ্রেম দিবস’ উদযাপন শুরু করে গেলেও এত বছরে তৃণমূল সরকার এখনও তা করল না কেন? বিধানসভায় এই নিয়ে প্রস্তাব এনে আলোচনা চাইলেও তা গ্রাহ্য হয়নি কেন?
‘নাকতলা জয়হিন্দ দেশপ্রেমী মঞ্চে’র অনুষ্ঠান।
‘নাকতলা জয়হিন্দ দেশপ্রেমী মঞ্চে’র অনুষ্ঠানেও এ দিন দেখা গিয়েছে একই ছবি। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, প্রাক্তন কাউন্সিলর ও আরএসপি-র কলকাতা জেলা সম্পাদক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া দেবরাজনের পাশাপশি ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কলকাতা পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর, তৃণমূলের মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নেতাজির জীবন ও সংগ্রামের উপরে নাকতলায় চিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করেছে ‘দেশপ্রেমী মঞ্চ’। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসওফ)-ও নেতাজির ১২৬তম জন্মদিনে ‘দেশপ্রেম দিবস’ পালন করেছে ফুরফুরা শরিফের কেন্দ্রীয় দফতরে। অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন আইএসএফের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। নেতাজি-স্মরণ অনুষ্ঠান হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস দফতর বিধান ভবনেও।