গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর থেকেই আরএসএস-এর পরামর্শ মেনে রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা ভোটে লড়তে শুরু করেছে বিজেপি। তার ফলও পেতে শুরু করেছে তারা। হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে সঙ্ঘের পরামর্শে চলে প্রায় হারা ম্যাচ জেতার পরে এ বারে মহারাষ্ট্রে আসন্ন পুর ও পঞ্চায়েত ভোটেও বাজিমাত করতে সঙ্ঘের কথা মতোই চলবে বিজেপি। সূত্রের খবর, আসন্ন পুর ও পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির কার্যপদ্ধতি ঠিক করতে মুম্বইয়ের লোয়ার পারেলে দু’দিনের একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস, অর্থমন্ত্রী চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলে এবং কার্যনির্বাহী সভাপতি রবীন্দ্র চহ্বাণ ছাড়াও বিজেপির সব মন্ত্রীকে বাধ্যতামূলক ভাবে উপস্থিত থাকতে হবে।
বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে বিজেপি বা সঙ্ঘের তরফে কেউই মুখ খুলতে চাননি। তবে সূত্রের খবর, সঙ্ঘের হিন্দুত্ববাদী ভাবধারাকে আরও তৃণমূল স্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য সরকার পরবর্তী পাঁচ বছর ধরে কোন পথে চলবে, তার দিশা দেবেন সঙ্ঘ নেতারা। সেই মতোই চলতে হবে বিজেপির মন্ত্রীদের।
লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির একাধিক নেতা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, সঙ্ঘের সাহায্য ছাড়াই বিজেপি এখন স্বাবলম্বী। লোকসভা ভোটে জিততে সঙ্ঘের সাহায্য এখন বিজেপির দরকার নেই। এ নিয়ে বিজেপি-সঙ্ঘের দূরত্ব বাড়ে। লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দলবল সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। তার পর থেকেই ফের সঙ্ঘ শরণে বিজেপি নেতৃত্ব। মহারাষ্ট্র ভোটে বিজেপি জোটের বিপুল জয়ের পরে বিরোধী শিবিরের প্রবীণ নেতা শরদ পওয়ারও বিজেপির জয়ে সঙ্ঘের বিপুল ভূমিকার কথা প্রকাশ্যেই স্বীকার করে নিয়েছেন।
সঙ্ঘের একটি সূত্রের বক্তব্য, বৈঠকে মূলত আরএসএস-এর হিন্দুত্ববাদী ভাবধারাকে মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে কী ভাবে আরও ছড়িয়ে দেওয়া যায়, রাজ্যের বিজেপি সরকারকে সে ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশিকা দেবেন সঙ্ঘ নেতারা। পাশাপাশি রাজ্যে সরকারের কী ভাবে চলা উচিত, কী ভাবে কোনও বিষয়ে পদক্ষেপ করা উচিত, সে ব্যাপারেও বোঝাবেন সঙ্ঘের নেতারা। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব সরাসরি না বললেও বিষয়টি যে সে রকমই, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে স্পষ্ট, মহারাষ্ট্রের বিজেপি জোট সরকার কী ভাবে চলবে, আগামী পাঁচ বছর ধরে তা নিয়ন্ত্রণ করবে সঙ্ঘই।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তো বটেই, একাধিক সংস্থার নিয়ন্ত্রণেও সঙ্ঘের বড় ভূমিকা রয়েছে। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে সঙ্ঘ। তাদের প্রভাবেই বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি-শাসিত সরকারগুলি পরিচালিত হয়। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা দলকে সঙ্ঘের থেকে আলাদা করতে চাইলেও কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। দেশের বিভিন্ন সরকারি পদ ও প্রতিষ্ঠানে সঙ্ঘের এই চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই সরব কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধী শিবিরের একাধিক নেতা। রাহুল-সহ বিরোধী নেতাদের মতে, বিজেপিকে সামনে রেখে সঙ্ঘই আসলে দেশের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে রেখেছে। তাই সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে তারা নিয়ন্ত্রণ করে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মও তারাই নিয়ন্ত্রণ করে।