(বাঁ দিকে) মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি। হাওড়া পুরসভার প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে উত্তাল শাসকদলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। তারই মাঝে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে উত্তাপ ছড়িয়েছিল হাওড়া জেলা তৃণমূলের রাজনীতিতে। শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি কার্নিভালের আয়োজনকে কেন্দ্র করে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি এবং হাওড়া পুরসভার প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সেই দ্বন্দ্ব কোনওক্রমে সামাল দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই দ্বন্দ্বের রেশ ছড়াল নতুন বছরের শুরুতেও। এ বার দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে শিবপুর বিধানসভার অন্তর্গত একটি রাস্তার সংস্কারকে কেন্দ্র করে। শিবপুর থেকে সাঁতরাগাছি স্টেশন এবং দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে ওঠার জন্য ফ্লাইওভারে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় পড়েছিল। মাসখানেক আগে সেই রাস্তাটির সংস্কার শুরু হয়। রাস্তাটির সংস্কার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তা সংলগ্ন দেওয়ালে একটি ফ্লেক্স লাগানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজের ছবি দিয়ে ওই ফ্লেক্সে লেখা হয়, “শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক মনোজ তিওয়ারি মহাশয়ের ঐকান্তিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় এবং হাওড়া মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের সহযোগিতায় এটি ঘোষ রাস্তাটি নির্মিত হইতেছে।”
ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ওই রাস্তাটির সংস্কারের কাজ শেষ হয়। গত সপ্তাহে ওই রাস্তাটির উদ্বোধন করেন হাওড়া পুরসভার প্রশাসক সুজয়। পরে মনোজের নামের পাশের দেওয়ালে আরও একটি ফ্লেক্স লাগানো হয়েছে। সেখানে আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতার ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, “মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এবং হাওড়া পৌর নিগমের মাননীয় প্রশাসক ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী মহাশয়ের আন্তরিক উদ্যোগে নিগমের আর্থিক সহায়তায় ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের বহু প্রতীক্ষিত এটি ঘোষ রোডের রাস্তা মহিয়ারী রোড থেকে ব্রিজের তলা পর্যন্ত নতুন ভাবে সিমেন্ট-কংক্রিট রাস্তা তৈরি করার কাজ শেষ হল।” মন্ত্রীর ফ্লেক্সের পাল্টা পুর প্রশাসকের ফ্লেক্স লাগানোর ঘটনায় ফের হাওড়া তৃণমূলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। এ বার গোলমাল বেধেছে রাস্তা তৈরির কৃতিত্ব নিয়ে। ২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী তৃতীয় বার নবান্নের ক্ষমতা দখল করলে হাওড়া পুরসভার প্রশাসক করা হয় পেশায় চিকিৎসক সুজয়কে। হাওড়া রাজনীতির কারবারিদের একাংশের কথায়, সেই সময় থেকেই মনোজের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সুজয়ের।
রাস্তা তৈরির কৃতিত্ব নিয়ে মনোজ-ঘনিষ্ঠ শিবপুরের এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা বলেন, “এটি ঘোষ রোডটি দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়েছিল। বিধায়ক হিসাবে মনোজ তিওয়ারির কাছে সেই রাস্তা সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছিল। অভিযোগ পেয়ে মন্ত্রী নিজে ওই রাস্তা পরিদর্শনের পর হাওড়া পৌরসভার কাছে রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলেন। যত দ্রুত সম্ভব শিবপুর বিধানসভার এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি সংস্কারের পক্ষে সরব হয়েছিলেন তিনি। তাঁর দাবি মেনেই হাওড়া পুরসভা কাজ শুরু করে।” ওই তৃণমূল নেতার আরও দাবি, “রাস্তা সংস্কার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিধায়কের তরফ থেকে দলেরই একাংশ ওখানে ফ্লেক্স লাগিয়ে জনতাকে জানিয়ে দেয় যে বিধায়ক তাঁদের দাবি পূরণ করেছেন। কিন্তু রাস্তা উদ্বোধনের সময় বিধায়ক তথা মন্ত্রীকে ডাকা দূর, তাঁকে জানানো পর্যন্ত হয়নি। শুধু এই রাস্তাটির ক্ষেত্রেই নয়, পুরসভা শিবপুর কেন্দ্রে কোনও কাজ করলে তা বিধায়ককে জানানো হয় না, কোনও অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না।” এমন অভিযোগের উত্তর জানতে হাওড়া পুরসভার প্রশাসক সুজয়ের মোবাইলে ফোন করা হলে, তিনি ফোন ধরেননি।
তবে হাওড়া পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, এটি ঘোষ রোডের বেহাল অবস্থার কথা জানতে পেরে প্রশাসক সুজয় নিজের উদ্যোগেই এই রাস্তাটি সংস্কার করিয়েছেন। সেই মতোই জনগণের অবগতির জন্য ফ্লেক্সটিও লাগানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কারও ফ্লেক্সের পাল্টা জবাব দিতে ওই ফ্লেক্সটি লাগানো হয়নি। পুরসভা দ্বন্দ্বের কথা মানতে না চাইলেও হাওড়া জেলার রাজনীতিতে কান পাতলেই শোনা যায় মনোজ বনাম আরও এক প্রবীণ মন্ত্রীর লড়াইয়ের কথা। সেই লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছেন পুর প্রশাসকও। এবং সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের কার্নিভালকে ঘিরে। এই দ্বন্দ্ব যে সহজে মেটার নয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত হাওড়া জেলা তৃণমূলের নেতৃত্বের একাংশ।