TMC Leader Murder Case

ব্যবসায়িক ‘শত্রুতা’ থেকেই কি খুন নেতা

পুলিশ জেলার সুপার জবি টমাস রবিবার বলেন, “তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযুক্তেরা শীঘ্রই ধরা পড়বে।”

Advertisement

অভিজিৎ পাল

ইসলামপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৬:৫৯
Share:

নিহত তৃণমূল নেতা বাপি রায়। —ফাইল ছবি।

ইসলামপুরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে তৃণমূল নেতা বাপি রায়ের খুনের ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু রবিবার রাত পর্যন্ত ঘটনার কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। এখনও পর্য়ন্ত কাউকে গ্রেফতারও করা যায়নি। এই খুনের পিছনে রাজনীতি রয়েছে, নাকি নির্মাণকাজ সংক্রান্ত ব্যবসায় লেনদেন সংক্রান্ত কোনও কারণ রয়েছে, তাও খোলসা করেনি পুলিশ। শনিবার রাতে মাদারিপুরে একটি ধাবায় বাপির সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হন ইসলামপুরের রামগঞ্জ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রিজওয়ানা খাতুনের স্বামী সাজ্জাদ হোসেনও। সাজ্জাদ এখন শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল, দাবি স্ত্রী’র।

Advertisement

ইসলামপুর পুলিশ জেলার সুপার জবি টমাস রবিবার বলেন, “তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযুক্তেরা শীঘ্রই ধরা পড়বে।” তবে বাপির স্ত্রী, ইসলামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য লিপি রায় বিশ্বাস ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “ওকে (বাপি) কেউ ফোন করে ধাবায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। ওখানে তো গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের স্বামী, অন্যান্য গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, অনেকেই ছিলেন। তবে শুধু ওকেই কেন গুলি করা হল? ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করছি।” তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলার সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, “ঘটনা তদন্ত করছেন উত্তরবঙ্গের আইজি। ওঁদের পরিবার সিবিআই তদন্তের দাবি করতেই পারে। পুলিশ জানিয়েছে, দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।”

রবিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাপির দেহের ময়না-তদন্ত হয়। সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ দেহ পৌঁছয় ইসলামপুরের শিবনগর কলোনির বাড়িতে। সেখানে ছিলেন কানাইয়ালাল‌ আগরওয়াল, ব্লক তৃণমূল সভাপতি জাকিরহোসেন, ইসলামপুরের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে সে সময় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, স্ত্রী লিপি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হওয়ার পর থেকেই এলাকায় বাপির ‘প্রভাব’ বাড়তে শুরু করে। এক সময়ে তিনি রাস্তা নির্মাণকারী সংস্থার গাড়ি চালাতেন। স্ত্রী’র রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে এলাকায় জমি কেনাবেচার কারবারের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। জাল মদের কারবারের অভিযোগে গত বছরের শেষে বাপিকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল। ওই মামলায় বর্তমানে তিনি জামিনে ছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, স্ত্রীর হয়ে বাপিই পঞ্চায়েত সমিতির কাজ পরিচালনা করতেন। স্ত্রী’র নির্বাচনী এলাকায় নির্মাণ কাজের বরাত কারা পাবেন, তাও বাপি নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ। বাপিকে খুনের নেপথ্যে এলাকার নির্মাণ কাজের টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয় থাকতে পারে বলেও পুলিশের দাবি। যার সঙ্গে জড়িত গুলিতে আহত সাজ্জাদও।

পুলিশের দাবি, শনিবার সন্ধেয় মাদারিপুরে জাতীয় সড়কের ধারে একটি ধাবায় বাপি, সাজ্জাদ-সহ রামগঞ্জ-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার আরও কয়েক জন নেতা টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই আলোচনা করছিলেন। তখনই প্রায় ১৫ জনের দুষ্কৃতীর একটি দল ওই ধাবায় চড়াও হয়। দুষ্কৃতীরা প্রথমে বাপির চুলের মুঠি ও পরে জামার কলার ধরে তাঁকে একাধিক গুলি করে। বাপিলুটিয়ে পড়তেই দুষ্কৃতীরা পালানোর জন্য এলোপাথাড়ি গুলি চালাতেশুরু করে। তখনই সাজ্জাদ গুলিবিদ্ধ হন। তদন্তকারী এক পুলিশ কর্তা বলেন, “ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বাপিই দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য ছিল। দুষ্কৃতীরা গাড়িতে শিলিগুড়ি কিংবা বিহার থেকে এসেছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বাপি ওই ধাবায় রয়েছেন, তা কেউ বা কারা দুষ্কৃতীদের খবর দিয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশের দাবি, ওই দিন ধাবায় উপস্থিত সকলের মোবাইল ফোনের ‘কল লিস্ট’ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আহত সাজ্জাদের স্ত্রী রিজওয়ানা খাতুন জানান, শনিবারের ঘটনার বিষয়ে স্বামীর সঙ্গে তাঁর এখনও কোনওকথা হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement