ফাইল চিত্র।
বিভিন্ন মহল থেকে বার বার উঠে আসছে একই প্রশ্ন, নারদ কাণ্ডে দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র ও প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হলে কেন ছাড় পাবেন তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়া মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারী।
নারদ কাণ্ডের মূল যে উদ্যোগী, যিনি ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে কলকাতায় এসে ২০১৪-তে ওই স্টিং অপারেশন করেছিলেন, সেই সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েলও সোমবার চার প্রভাবশালীর গ্রেফতারের খবরে একই প্রশ্ন তুলছেন। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পুরষ্কার হিসেবেই মামলা থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন মুকুল-শুভেন্দু? নারদে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে শুভেন্দুকে। মুকুলের নাম সরাসরি বলেছেন এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত, ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হওয়া পুলিশ কর্তা এস এম এইচ মির্জা। তার পরেও কেন ছাড়?
সিবিআইয়ের যুক্তি, যখন নারদ কাণ্ড হয়, তখন শুভেন্দু ছিলেন লোকসভার সাংসদ। মুকুল ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ। ওই দু’জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গেলে লোকসভা ও রাজ্যসভার অধ্যক্ষের অনুমতি লাগবে। সিবিআইয়ের দাবি, শুধু শুভেন্দু নন, সেই সময়ে নারদে অভিযুক্ত যাঁরাই লোকসভার সাংসদ ছিলেন, সেই সৌগত রায়, অপরূপা পোদ্দার, কাকলি ঘোষদস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে চাওয়া অনুমতি এখনও পাওয়া যায়নি। তাই শুভেন্দু-সহ এঁদের কারও বিরুদ্ধেই এ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
কানাঘুষো শোনা গিয়েছে, এ দিনই শুভেন্দুর দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। মুকুল সারা দিন নিভৃতবাসেই ছিলেন। মুকুলের ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের যুক্তি, মুকুলকে সরাসরি টাকা নিতে দেখা যায়নি। তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যসভার অধ্যক্ষের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, নারদে অভিযুক্ত পুলিশ কর্তা মির্জাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকাকালীন জবানবন্দি দিয়ে জানান যে তিনি মুকুলের নির্দেশেই টাকা নিয়েছিলেন। তা হলেও কেন ছাড় মুকুলকে? সদুত্তর নেই সিবিআইয়ের কাছে। তবে, তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, সময় মতো মুকুলের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তথ্যপ্রমাণ কোর্টে পেশ করা হবে।
সিবিআইয়ের যুক্তি, যে চার জনকে সোমবার গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায় ঘটনার সময়ে, ২০১৪-তে রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। ফলে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গেলে রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষের অনুমতি নিতে হত। যদিও বিমানবাবু একাধিক বার দাবি করেছেন, তাঁর অনুমতি চেয়ে কখনও সিবিআই তাঁকে চিঠি দেয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো স্পিকার পদেই ছিলাম। সিবিআই আমাকে কিছু জানায়নি। অনুমতিও নেয়নি।’’
অভিযোগ, রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষকে এড়িয়ে ৭ মে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ওই চার জনের নামে সোমবার চার্জশিট পেশ এবং তাঁদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। সিবিআইয়ের ব্যাখ্যা, বিধানসভা যখন ভেঙে দেওয়া হয়, তখন এমন অনুমতি রাজ্যপাল দিতে পারেন। রাজ্যে ভোটের ফল ঘোষণার পরে, শপথের আগে রাজ্যপাল বিধানসভা ভেঙে দেন। তার পর নতুন মন্ত্রিসভার শপথের মধ্যেই রাজ্যপালের অনুমতি নেয় সিবিআই। ফলত, বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও আইনজীবীদের একাংশের ব্যাখ্যা, ভারতীয় সংবিধানের ১৭৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, অধ্যক্ষের পদ কখনও শূন্য থাকে না। বিধানসভা ভেঙে গেলেও থাকে না। যত ক্ষণ না নতুন অধ্যক্ষ শপথ নিচ্ছেন, তত ক্ষণ পর্যন্ত পুরনো অধ্যক্ষই পদে বহাল থাকেন। সে ক্ষেত্রে কেন বিধানসভার অধ্যক্ষকে এড়িয়ে সিবিআই রাজ্যপালের অনুমতি নিল, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।