শুভেন্দু অধিকারী, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও অধীর চৌধুরী।
মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলির সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে মোদী-মমতার সঙ্ঘাত। সেই সঙ্ঘাতের কারণ প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেই ‘ট্রিগার’ বলে মনে করছেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী। শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর বদলির নির্দেশ জারি করতেই জোর বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। ঘটনাচক্রে, কলাইকুণ্ডার প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে আমন্ত্রিত ছিলেন অধীরও। বৈঠকে হাজির না হলেও, শনিবার দুপুরে এ বিষয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া দেন বহরমপুরের সাংসদ। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে ‘‘মুখ্যসচিবের চাকরি মেয়াদ বাড়ানো আবেদন করেছিলেন। তার পরেই তাঁর চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধিতে সম্মতি জানায় কেন্দ্র। এটা একদম স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল, কিন্তু শুক্রবার আবার তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বেড়ে গেল। এই সঙ্ঘাত বেড়ে গেল তার কারণ, গতকাল কলাইকুণ্ডায় ইয়াস ঘুর্নিঝড় মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুবাবু। আমার মনে হয় এ ক্ষেত্রে এই সংঘাতে ট্রিগারের কাজ করেছেন তিনিই।’’ প্রসঙ্গত, শুভেন্দু তৃণমূলে থাকাকালীন অধীরের সঙ্গে অহি-নকুল সম্পর্ক ছিল। কারণ শুভেন্দু মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের দায়িত্বে থাকাকালীনই শক্তিক্ষয় শুরু হয়েছিল অধীরের। তাই মনে করা হচ্ছে, শিবির বদলালেও শুভেন্দু-অধীর দ্বৈরথ কিন্তু আগামী দিনেও বহাল থাকবে।
অধীর অভিযোগ করেছেন, ‘‘দেশের প্রধানমন্ত্রী সকলের সঙ্গেই আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু বিচারটা সমান হওয়া দরকার। গুজরাতে যখন সাইক্লোন হল সেখানে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু সেখানে কংগ্রেস দলের বিরোধী নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তাঁর এই ধরনের কাউকে খাতির করব, আর কাউকে করব না, এটা নিয়ে।’’ কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা আরও অভিযোগ করেছেন, ‘‘কংগ্রেস দেশে করোনা দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর বার বার বলেছিল সর্বদলীয় মিটিং করতে, কিন্তু সেই মিটিং করা হল না। পশ্চিমবঙ্গে করোনা থেকে এত বড় বিপর্যয় হলেও বিরোধীদের ডেকে আলোচনা করা হয় না। বিরোধীদের অবজ্ঞা করা হয়, মানে গণতন্ত্রকে অবজ্ঞা করা হয় বলে মনে করি।’’
মুখ্যসচিবের বদলি নিয়ে রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলার মুখ্যসচিবকে দিল্লি পাঠিয়েছেন, তাঁকে নাকি দিল্লিতে গিয়ে বসতে হবে এখন। ৩১ তারিখের মধ্যেই তাঁকে নাকি যোগ দিতে হবে। ঠিক কোন সময়টায়, যখন অতিমারির তাণ্ডব চলছে, সুপার সাইক্লোনে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিরন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যখন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় কাজ মুখ্যসচিবের কাঁধেই রয়েছে, তখন তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া, মোটেই সমীচীন হচ্ছে না। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যায় এবং ভুল পদক্ষেপ। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করি। আমি আশা করব, কেন্দ্রীয় সরকার অবিলম্বে তাঁদের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবেন। নতুবা প্রমাণিত হবে আবারও যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর উপরে কেন্দ্র নির্মম ভাবে আঘাত করছে। যা বাংলার মানুষ একেবারেই বরদাস্ত করবে না।’’