নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং ফিরহাদ হাকিম নিজস্ব চিত্র
হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে নারদ মামলার শুনানি নিয়ে অনিশ্চয়তা। আর কিছু ক্ষণ পরেই শুরু হওয়ার কথা নারদ-মামলার শুনানি। হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা। উপস্থিত থাকবেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি-সহ ৫ বিচারপতি। পুরো শুনানিকার্য চলবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। সোমবার বিচারপতিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হবেন আইনজীবীরাও। কিন্তু ইতিমধ্যেই যে হেতু বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই, তাই এই শুনানি আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
কী হতে পারে হাই কোর্টে?
আইনজীবী প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘৫ বিচারপতির বেঞ্চ বসবেই। সেখানে সিবিআইকে জানাতে হবে, তারা বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে । তার পর ৫ বিচারপতি সিদ্ধান্ত নেবেন, শুনানি চলবে কি না। যদি ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট এই শুনানির উপর স্থগিতাদেশ দেয় এবং সেটা সিবিআই সোমবার হাই কোর্টে দাখিল করতে পারে, তা হলে সোমবার শুনানি বন্ধ হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে, সিবিআইয়ের কাছে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ নেই। সে ক্ষেত্রে হাই কোর্টের বেঞ্চ সিবিআইকে কিছু দিন সময় দিতে পারে স্থগিতাদেশ আনার ব্যাপারে। তবে ততদিন পর্যন্ত শুনানি হবে কি না, তা নির্ভর করছে হাই কোর্টের বেঞ্চের উপর।’’
নারদ-কাণ্ডে ১৭ মে রাজ্যের ৪ নেতা-মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে সিবিআই। গ্রেফতার হন দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং বিধায়ক মদন মিত্র ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। ওইদিনই ধৃতদের জামিন দেয় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্ট নিম্ন আদালতের সেই রায়কে খারিজ করে দেয়। ফলে জেলেই ঠাঁই হয় অভিযুক্তদের। এরপর জামিনের আবেদনে দু'দিন ধরে শুনানি চলে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। গত শুক্রবার ধৃতদের জামিন নিয়ে হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি ছিল, করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হোক। যা নিয়ে আপত্তি জানান প্রধান বিচারপতি। শেষমেশ ওই মামলা বৃহত্তর বেঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এবং ততদিন ধৃতদের গৃহবন্দির নির্দেশ দেয় আদালত। এমনকি ওই দিনই গঠন করা হয় পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির পাশাপাশি বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি সৌমেন সেনকে রাখা হয় বৃহত্তর বেঞ্চে। এই বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা, তারপরই নতুন বেঞ্চে শুরু হওয়ার কথা নারদ-মামলার শুনানি। অভিযুক্তদের হয়ে সওয়াল করবেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, সিদ্ধার্থ লুথরা এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সিবিআইয়ের পক্ষ নেবেন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ও ওয়াই জে দস্তুর সওয়াল। অন্য দিকে, যদি মামলাটির শুনানি হয় এই বেঞ্চে, তা হলে পুনরায় প্রথম থেকে শুনানি হবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। কারণ বৃহত্তর বেঞ্চের ৩ সদস্যই নতুন। ফলে পুরো মামলাটি না শুনে তাঁদের পক্ষেও মতামত দেওয়া অসম্ভব। তাই সোমবার গোড়া থেকেই নারদ-মামলার শুনানি হতে পারে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে বিগত দিনগুলির মতো সোমবারও পুরো বিচার প্রক্রিয়া চলবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। সেখানেই অংশ নেবেন সমস্ত বিচারপতি ও আইনজীবীরা। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে বিচারকার্য। সেক্ষেত্রে বিচার চলাকালীন যাতে কোনও যান্ত্রিক সমস্যা না হয় সে দিকে প্রথমেই নজর দিচ্ছে হাই কোর্ট কর্তৃপক্ষ।