নথিভুক্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের এ বার আধার লিঙ্ক করতে চায় শ্রম দফতর প্রতীকী ছবি
করোনাকালে লকডাউনের সময় দেশের অসংগঠিত শ্রমিকদের দূরবস্থার কথা প্রকাশ্যে এসেছে গোটা দেশের কাছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হয়েছে অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা যোজনা প্রকল্প। সম্প্রতি শ্রম দফতর জানতে পেরেছে, রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের সহজ ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে এর অপব্যবহার করছেন কিছু অসাধু ব্যক্তি। তাই এ ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নিয়ে শ্রম দফতর তার অধীনে নথিভুক্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের আধার কার্ডের লিঙ্ক করার ব্যবস্থা করতে চলেছে। এর ফলে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন-সহ জনগণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্তত দু’কোটি তথ্য এই ছাঁকনি প্রক্রিয়ার আওতায় চলে আসবে বলেই জানাচ্ছে শ্রম দফতর।
শ্রম দফতর সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা যোজনার আওতায় এক কোটি ৩৪ লক্ষ অসংগঠিত শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬৪ লক্ষ শ্রমিকের আধার নম্বর দুয়ারে সরকার–সহ দফতরের অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে। বাকি তথ্য এখনও দফতরের হাতে আসেনি। সম্প্রতি দফতরের আধিকারিকরা বিভিন্ন জেলাওয়াড়ি খোঁজখবর করে জানতে পারেন, নথিভুক্ত শ্রমিক সংখ্যার মধ্যে অনেকটাই গরমিল রয়েছে। একই ব্যক্তি একাধিক নামে সরকারি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিচ্ছেন। এমনকি, প্রয়াত শ্রমিকের ক্ষেত্রে সরকারের ঘোষিত ক্ষতিপূরণের টাকাও নয়ছয় করা হয়েছে। তাই এই জালিয়াতি বন্ধ করার জন্য শ্রম দফতরের আধিকারিকরা আধার সংযোগের সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন। দফতরের অনুমান, আধার সংযোগ হয়ে গেলে নথিভুক্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের সংখ্যা কোটির নীচে চলে আসবে। ফলে অসাধু ব্যক্তিদের উদ্যোগ সহজেই আটকে প্রকৃত শ্রমিকদের প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা দেওয়া যাবে।
আধার সংযোগের এই উপায় দ্বারা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে শ্রম দফতর। এই কৌশলে এক দিকে সরকারি কোষাগারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে যেমন রাশ টানা যাবে, তেমনই সরকারি তথ্যভান্ডারকে স্বচ্ছ করা যাবে। একই যুক্তি আধিকারিকরা তুলে ধরেছেন এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও। শ্রম দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের পোর্টালে বর্তমানে ৩৬ লক্ষ নাম নথিভুক্ত রয়েছে। রাজ্য সরকারকে মাসে দেড় হাজার টাকা করে প্রতি বছর এক লক্ষ নথিভুক্ত বেকারকে ভাতা দিতে হচ্ছে যুবশ্রী প্রকল্পের আওতায়। সরকার চেয়েছিল,, নথিভুক্ত বেকাররাই একমাত্র এই পোর্টালে নাম তুলবেন। তবে নাম তোলার পর কেউ যদি রোজগারের পথ পেয়ে যান, তা হলে সংশ্লিষ্ট বেকার যুবক এই পোর্টাল থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেবেন। কিন্তু শ্রম দফতর জেনেছে, এমন অনেকের নাম যুবশ্রীর পোর্টালে রয়েছে, যাঁরা বর্তমানে কর্মরত। এ বার এই পোর্টাল থেকে তাঁদের নাম দূর করতেই আধার সংযোগকে হাতিয়ার করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম বলবৎ করার পক্ষে শ্রম দফতর। কারণ, নকল লেটারহেড কাজে লাগিয়ে একই সংগঠনের নামে একাধিক ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য আবেদন করা হচ্ছে। এই সব অসাধু উদ্যোগ রুখতে আধার সংযোগই দফতরের প্রধান হাতিয়ার বলে মনে করছে শ্রম দফতর।