শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
বিজয় দিবসের বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সম্ভাব্য নির্বাচনের দিনক্ষণের আভাস দেওয়ার পরেই বাংলাদেশে রাজনীতি তপ্ত হয়ে উঠেছে। আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন পর্ব শেষ করার জন্য বিএনপি যেমন তার ‘সমমনা’ দলগুলিকে বুঝিয়ে সরব হতে রাজি করিয়েছে, কোটা-বিরোধী ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে তৎপরতা বাড়িয়েছে। সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে হাসিনা সরকার উচ্ছেদের আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক দল ছাত্র ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নামে রবিবার ইউনূসের বাসভবন ঘেরাওয়ের ডাকও দিয়েছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার আপ্তসহায়কের হাতে স্মারকলিপি তুলে দিয়ে ছাত্ররা এ জন্য সরকারকে সাত দিনের সময়সীমা দিয়েছে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করতে রেড কর্নার নোটিস জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করার জন্য আজ পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত। পুলিশ আজ এই আবেদন করেছে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। আন্দোলন দমনে বলপ্রয়োগ এবং গণহত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে একগুচ্ছ মামলায় শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের-সহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে ১৭ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল যুদ্ধাপরাধ আদালত। চিফ প্রসিকিউটর জামায়াতে ইসলামীর নেতা মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ দিন আদালতকে জানান, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়ায় তাঁকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। আদালত যেন তাঁকে গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোলের কাছে রেড কর্নার নোটিস জারির আবেদন জানানোর নির্দেশ দেন। বিচাৈরপতিরা পুলিশ কর্তাদের কাছে এ বিষয়ে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও আইনজীবীরা বলছেন, অনেকের বিরুদ্ধেই ইন্টারপোলের এমন নোটিস রয়েছে। নোটিস জারি হলেই ভারত সরকার হাসিনাকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে দেবে, এমনটা হওয়ার নয়।
এ দিনই যশোরে আওয়ামী লীগের ১৬৭ জন নেতাকর্মী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে গিয়েছেন। দলটির অভিযোগ হেনস্থার উদ্দেশ্যে তাঁদের নানা সাজানো মামলায় আসামি করেছে ইউনূস সরকার। আদালতে এ দিন তাঁরা ‘জয় বাংলা’, ‘মুক্তিযুদ্ধ জিন্দাবাদ’, ‘শেখ হাসিনা জিন্দাবাদ’ স্লোগান তোলেন। এ ভাবে আরও নেতাকর্মী বিভিন্ন শহরে আত্মসমর্পণ করবেন বলে দলের পক্ষে জানানো হয়েছে।
ইউনূস তাঁর বক্তৃতায় জানিয়েছিলেন, ভোটার তালিকা সংস্কার ও নির্বাচন কমিশন কাজ শুরু করার পরে ‘২০২৫-এর শেষ থেকে ২০২৬-এর প্রথম ভাগের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন করার কথা ভাবা যেতে পারে।’ পর দিন ইউনূসের প্রেস সচিব সেই সীমা বাড়িয়ে ২০২৬-এর জুন করেন। গোড়া থেকেই বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। ইউনূসের বক্তৃতার পরে এই দলের নেতৃত্ব ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন করার দাবি তোলে। একই সঙ্গে জানিয়ে দেয়, সরকার যদি ছাত্রদের দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করতে চায়, তা মেনে নেওয়া হবে না। তাদের সহযোগী দলগুলিও বিএনপিকে সমর্থন জানিয়েছে। এমন একটি দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, সরকার পক্ষ ছাত্রদের দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করাচ্ছে এবং এ জন্য নির্বাচনে বিলম্ব ঘটানো
হচ্ছে বলে আলোচনা রয়েছে। এর ফলে সরকারের প্রতি আস্থার
অভাব ঘটছে।
যে নতুন দলকে নিয়ে বিতর্ক, সেই জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন রবিবার বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ চায় নতুন রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বে থাকবে তরুণেরা। আমরা ছাত্র-তরুণ মিলে নয়া রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার কথা বলছি।” হোসেন জানান, আওয়ামী লীগকে তাঁরা রাজনীতিতে ফিরে আসতে দেবেন না। দরকার হলে তার জন্য আবার রক্ত দিতেও
তাঁরা তৈরি।