পুরসভার ভোট বাতিলের ক্ষমতা রাজ্যের রয়েছে, না কি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের? কলকাতা হাই কোর্টে এই প্রশ্নের জবাব দিতে নাজেহাল রাজ্য ও কমিশন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পুরসভার ভোট বাতিলের ক্ষমতা রাজ্যের রয়েছে, না কি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের? কলকাতা হাই কোর্টে এই প্রশ্নের জবাব দিতে নাজেহাল রাজ্য ও কমিশন। প্রায় এক ঘণ্টার শুনানিতে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে কেউই স্পষ্ট হতে না পারায় তিরস্কৃত হতে হল কলকাতা হাই কোর্টের কাছে। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের মন্তব্য, “আইন তৈরির প্রায় ২৭ বছর পরেও নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে কেউ স্পষ্ট নয়। একে অপরের দিকে আঙুল তুলছে। এটা কী ভাবে সম্ভব!”
কোভিড পরিবেশে আসন্ন চার পুরনিগমের ভোট বাতিল চেয়ে মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে। বৃহস্পতিবার ওই মামলার শুনানিতে ভোট স্থগিতের সিদ্ধান্ত কে নিতে পারে তা জানতে চায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের আইনজীবী সম্রাট সেন জানান, রাজ্য মতামত দিতে পারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় কমিশনই। নির্বাচন পরিচালন সংক্রান্ত ব্যাপারে তাদেরই সমস্ত ক্ষমতা রয়েছে। অন্য দিকে, কমিশনের আইনজীবী জয়ন্তকুমার মিত্র জানান, স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কমিশন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই সম্ভব।
দু’পক্ষের এই তরজার মধ্যে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “ভোটের দিন ক্ষণ কে ঠিক করে? কমিশন বলছে, রাজ্য। আর রাজ্য বলছে, কমিশন। কোনটা ঠিক?” কমিশনের আইনজীবীর উত্তর, “রাজ্য সুপারিশ করে। সেই মতো কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়।” পাল্টা প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “তা হলে ভোট স্থগিতের সিদ্ধান্ত কে নিতে পারে?” কমিশনের আইনজীবী বলেন, “রাজ্য চাইলে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে ভোট বন্ধ করতে পারে।”
অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি ফের বলেন, “ভোট স্থগিত করতে কমিশন পারে, রাজ্য পারে, না কি দু’জনেই পারে? আপনাদের সমস্যা কোথায়? আগে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করুন।”
জয়ন্ত জানান, রাজ্য ঠিক করে এটা পরিষ্কার। তার উপর বাকি সিদ্ধান্ত কমিশন নেয়। এ ভাবেই দু’পক্ষের মধ্যে চলে বাক-বিতণ্ডা! অবশেষে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, কমিশনের কি কোনও ক্ষমতা নেই স্থগিত করার? উত্তরে কমিশনের আর এক আইনজীবী জিষ্ণু বসু জানান, একক ভাবে ঘোষিত নির্বাচন স্থগিত করার ক্ষমতা তাদের নেই। কমিশনের এই অবস্থানের পরই আদালত জানায়, এ নিয়ে রায় দান আপাতত স্থগিত থাকল। দু’এক দিনের মধ্যেই রায় ঘোষণা করা হবে।
বৃহস্পতিবারের সওয়ালে জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “সংক্রমণের নিরিখে বাংলা এখন দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। এই অবস্থায় নির্বাচন হলে আক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে কিছু দিনের জন্য এই নির্বাচন স্থগিত করা হোক।”
একই সুর শোনা যায় বিজেপি-র আইনজীবী পিঙ্কি আনন্দের গলাতেও। আসন্ন চার পুরভোট এক মাস পিছনোর আর্জি জানান তিনি।