মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং সিভি আনন্দ বোস (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তাদের ‘বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মান’ দেয়। শুধু তাই নয়, তাঁর সরকার পুজো শেষে আয়োজন করে ‘দুর্গাপুজো কার্নিভাল’-এরও। এ বার রাজভবন ঘোষণা করল, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালও দুর্গাপুজো উপলক্ষে সম্মান জানাবেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতীদের। তার পোশাকি নাম হবে ‘দুর্গাভারত সম্মান’। বুধবার রাজভবনের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ওই সম্মান জানানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ের পর এ বার পুজো নিয়েও রাজ্যের সঙ্গে ‘টক্কর’ বাধতে চলেছে রাজভবনের?
তবে বাংলার রাজ্যপাল সম্মান জানালেও তা শুধুমাত্র বঙ্গবাসীর জন্য নয়। যে কোনও রাজ্যের কৃতীরাই এই সম্মানের দাবিদার হতে পারেন। গোটা দেশ থেকে এ জন্য মনোনয়নপত্র আহ্বান করেছে রাজভবন। শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান থেকে শুরু করে গবেষণা, তথ্যপ্রযুক্তি, সমাজসেবা, বাণিজ্য, চিকিৎসা— যে কোনও ধরনের শিল্প এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের কৃতীরাও এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হতে পারেন।
দুর্গাপুজো বাঙালির ‘জাতীয় উৎসব’ বলে ঘোষণা করে অনেক বছর আগেই নিজের বিশ্ব বাংলা-ব্র্যান্ডের ভাবনা ছড়িয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি মনে করেন, দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে মার্কেটিং, ব্যবসা, কত শিল্প, কত স্রষ্টা, কত ভাষা, কত দিশা, কত ভাবনার লগ্ন জন্ম নেয়। সেই ভাবনা থেকেই তাঁর সরকার ‘বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মান’ দেয়। পরে রাজ্য সরকার শুরু করে ‘দুর্গাপুজো কার্নিভাল’ও। প্রথমে কলকাতাকেন্দ্রিক হলেও পরের দিকে তা গোটা রাজ্যেই হয়। ২০২১ সালে ইউনেস্কোরও স্বীকৃতি পায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। ওই বছর ফ্রান্সের প্যারিসে আয়োজিত ইন্টারগভর্নমেন্ট কমিটির ষষ্ঠদশ অধিবেশনে ‘কলকাতার দুর্গাপুজো’কে ইউনেস্কোর ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’র তালিকায় স্থান দেওয়া হয়। তবে রাজভবনের তরফে দুর্গাপুজো নিয়ে এমন ভাবনা অতীতে কখনও হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না কেউই।
যে বিবৃতি রাজভবনের তরফে প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে পুরস্কারের কথা বিশদে জানানোর পাশাপাশি একটি ইমেল আইডির কথাও লেখা হয়েছে। ওই ঠিকানায় মেল করে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই জমা দিতে হবে কৃতীদের নাম-সহ মনোনয়ন।
‘দুর্গাভারত সম্মান’কে মোট তিন ভাগে ভাগ করেছে রাজভবন
১। দুর্গাভারত পরম সম্মান: এই সম্মানের প্রাপককে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
২। দুর্গাভারত সম্মান: পুরস্কার প্রাপক ৫০ হাজার টাকা পাবেন।
৩। দুর্গাভারত পুরস্কার: ২৫ হাজার টাকা পাবেন মনোনীত পুরস্কার প্রাপক।
কোন কোন ক্ষেত্রে সম্মান পাবেন কৃতীরা? রাজভবনের তরফে তার একটি দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন শাখার ১১টি ক্ষেত্র ছাড়াও রাখা হয়েছে ‘অন্যান্য’ নামে একটি জায়গা। যেখানে ওই ১১টি ক্ষেত্রের বাইরের কৃতীরাও মনোনীত হতে পারেন।
তালিকার সেই ১১
১। শিল্পকলা: গান, ছবি আঁকা, ভাস্কর্য, আলোকচিত্র, সিনেমা, থিয়েটার, লোকশিল্প, আদিবাসী শিল্প বা যে কোনও শিল্প।
২। সমাজকল্যাণমূলক কাজ: সমাজসেবা, দান-ধ্যান, কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি কোনও প্রকল্প ইত্যাদি।
৩। পাবলিক অ্যাফেয়ার্স: আইন, জনজীবন সংক্রান্ত বিষয়।
৪। বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বা ইঞ্জিনিয়ারিং: পরমাণু বিজ্ঞান, মহাকাশ প্রকৌশল ইত্যাদি।
৫। তথ্যপ্রযুক্তি, বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা
৬। বাণিজ্য এবং শিল্প: ব্যাঙ্ক, অর্থনীতি, ম্যানেজমেন্ট, পর্যটনের প্রচার, ব্যবসা।
৭। চিকিৎসা: আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি, নেচারোপ্যাথি, সিদ্ধা ইত্যাদি বিভিন্ন চিকিৎসার মাধ্যমে গবেষণা এবং বিশেষ কৃতিত্ব।
৮। সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা, প্রকাশনা।
৯। সাহিত্য, কবিতা, শিক্ষার প্রচার, সাক্ষরতার প্রচার।
১০। প্রশাসনিক কাজে কৃতীরা
১১। খেলাধুলো
এ ছাড়াও থাকছে ‘অন্যান্য’
সেখানে বলা হয়েছে, উপরোক্ত সব ক’টি বিভাগের বাইরে থেকেও যাঁরা ভারতীয় সংস্কৃতির প্রচারে ভাল কাজ করেছেন, মানবাধিকার রক্ষা, বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে ভাল কাজ করেছেন, তাঁরাও মনোনীত হতে পারেন এই সম্মানের জন্য।
আগামী শনিবার অর্থাৎ, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই সমস্ত বিভাগে মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে। যার অর্থ হাতে সময় আর মাত্র তিন দিন। যে ইমেলে এই মনোনয়ন পাঠানো যাবে— durgabharatawards@gmail.com