—প্রতীকী ছবি।
সুন্দরবনের লোকালয়ে ঘন ঘন বাঘের প্রবেশ রুখতে বন দফতর উদ্যোগী হতে চলেছে। সেই পর্যায়ে জোড়া প্রযুক্তির ব্যবহার করে বার বার জনবসতি এলাকায় বাঘের প্রবেশ রুখতে চাইছে তারা। মৈপীঠের কিশোরী মোহনপুর থেকে কুলতলির দেউলবাড়ি দেবীপুর পর্যন্ত বিস্তৃত জঙ্গলে ১০০টি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর। বন দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এই ক্যামেরাগুলি গ্রামসংলগ্ন আজমলমারি ১, ২, ৩, ১১, ১২ নম্বর এবং হেরোভাঙা ৯ নম্বর জঙ্গলে লাগানো হবে, যাতে বাঘ লোকালয়ে প্রবেশ মাত্রই বন দফতর জানতে পারে। এই ক্যামেরাগুলি বাঘের গতিবিধি রেকর্ড করতে পারবে বলেই জানা গিয়েছে। ফলে কোন বাঘ, কত বার, এবং কোথায় লোকালয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তা সহজেই নির্ধারণ করা সম্ভব হবে বন দফতরের তরফে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে বাঘের আচরণ বিশ্লেষণ করা যাবে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও কার্যকর ভাবে সতর্ক করা যাবে।
বাঘের লোকালয়ে প্রবেশ রোধে ক্যামেরার পাশাপাশি বিশেষ সেন্সরযুক্ত আলোও বসাতে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। জঙ্গলের নির্দিষ্ট স্থানে পাঁচ ফুট উচ্চতায় লাল, নীল এবং সবুজ রঙের আলো লাগানো হবে। সেই আলো এমন ভাবে লাগানো হবে, যাতে লোকালয়ে প্রবেশের আগেই সরাসরি তা বাঘের চোখে পড়ে। বন দফতরের মতে, আলো দেখেই বাঘ জঙ্গলে ফিরে যাবে। প্রতি দিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত এই আলো জ্বালানো থাকবে। সুন্দরবনের জনবসতি এলাকায় বাঘের আগমন ঠেকাতে এবং জঙ্গলের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপগুলি করা হচ্ছে বলেই দাবি বন আধিকারিকদের। তাঁদের কথায়, সুন্দরবন অঞ্চল বাঘের প্রাকৃতিক আবাসভূমি হওয়ায় এখানে বাঘের উপস্থিতি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে, লোকালয়ে বাঘের ঢুকে পড়া শুধু মানুষের জন্য নয়, বাঘের নিরাপত্তার জন্যও চিন্তার বিষয়ে। এই প্রকল্পে স্থানীয় গ্রামবাসীদেরও সচেতনতার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
নতুন এই জোড়া প্রযুক্তি চালু হলে এবং বাঘের চলাচল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে বন দফতর দ্রুত পদক্ষেপ করতে পারবে। পাশাপাশি, নতুন প্রযুক্তি বাঘ এবং মানুষের মধ্যে সংঘাত কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বন দফতরের এই উদ্যোগ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি কার্যকর উদাহরণ হতে পারে বলেই মত সুন্দরবনে কর্মরত বন আধিকারিকদের।