মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের ট্যাবের টাকা নয়ছয় হওয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করল নবান্ন। সম্প্রতি এক নির্দেশিকা জারি করেছে অর্থ দফতর। নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের যে সব দফতর বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেয় তাদের জন্যই জারি করা হয়েছে এই ১৬ দফা নির্দেশিকা।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীর ভান্ডার, রূপশ্রী, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পগুলি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বরাবর ভোটের ‘ডিভিডেন্ড’ দিয়ে এসেছে। ট্যাব-কাণ্ডের পর রাজ্যের প্রকল্পগুলি থেকে সাধারণ মানুষ কতটা সুবিধা পাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তাই এমন কড়া নির্দেশিকায় নিজের যাবতীয় প্রকল্পকে সুসংহত করে একসূত্রে বাঁধতে চাইছেন মমতা।
নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর আগে দু’বার করে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর-সহ যাবতীয় তথ্য ভাল ভাবে যাচাই করে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে, কোনও উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর আগে, তার ব্যাঙ্ক পাসবইয়ের প্রথম পাতার প্রতিলিপি কিংবা ‘ক্যানসেল চেক’ নিতে হবে। যেখানে উপভোক্তার নাম, অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং আইএফএসসি থাকবে। তৃতীয় নিয়মে বলা হয়েছে, উপভোক্তা কোন প্রকল্পে টাকা পাবেন, সে বিষয়ে দফতরকে সতর্ক থাকতে হবে। চতুর্থত, একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যেন একাধিক উপভোক্তার না হয়। পঞ্চমত, উপভোক্তার আইএফএসসি যাচাই করতে হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তালিকা দেখে।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ষষ্ঠত, উপভোক্তার অ্যাকাউন্ট যেন সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে এমন শাখায় থাকে যা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে। সপ্তম, গ্রুপ এ-র নীচের পদের কোনও আধিকারিক যেন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের অনুমোদন না দেন। অষ্টমত, কোনও লেনদেন ব্যর্থ হলে সে ক্ষেত্রে সংশোধন নিয়ন্ত্রিত হবে। ওই লেনদেন ‘অটো ক্যানসেল’ হওয়ার পর নতুন করে পাঠাতে হবে, যদি তা একই অর্থবর্ষের মধ্যে হয়। নতুন করে ওই লেনদেন আবার করা হবে। নবম, সব উপভোক্তার তথ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অধীনস্থ এনপিসিআইএল যাচাই করবে। দশম, যাচাই করা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং আইএফএসসি উপভোক্তার নামের সঙ্গে মিলে গেলে, তবেই যেন টাকা দেওয়া হয়।
একাদশ, নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, উপভোক্তার নাম এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গরমিল ধরা পড়লে বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। দ্বাদশ, টাকা পাঠানোর পর উপভোক্তার ফোনে এসএমএস পাঠাতে হবে। শুধু টাকা গেলেই নয়, আবেদন মঞ্জুর বা বাতিল হলে, পাঠাতে হবে এসএমএস। ‘প্রসেসড অ্যাট ট্রেজারি’, ‘পেমেন্ট সাকসেস’, ‘পেমেন্ট ফেলড’ মেসেজ পাঠাতে হবে। কোনও উপভোক্তার টাকা যাচ্ছে না দেখা গেলে, প্রয়োজনীয় সংশোধন প্রয়োজন জানিয়ে এসএমএস পাঠাতে হবে। ত্রয়োদশ, অনলাইনে আবেদন জমা পড়ার পরে কোনওরকম কাগজ, ফর্ম ইত্যাদি অফলাইনে নেওয়া যাবে না।
চতুর্দশ, অফলাইনে কোনও আবেদন জমা পড়লে উপভোক্তার যাবতীয় তথ্য এমন ভাবে তুলতে হবে, যাতে সহজেই সংশ্লিষ্ট উপভোক্তার তথ্য যাচাই করা যায়। পঞ্চদশ, টাকা পাঠানোর পোর্টাল এবং বিভাগীয় পোর্টালের মধ্যে সমন্বয় মসৃণ করতে হবে। ফাইল ট্রান্সফারের অ্যাপ্লিকেশন সবসময় সর্বশেষ ‘ভার্সানে’র হতে হবে। ষষ্ঠদশ, যে সব দফতর টাকা পাঠায় তাদের মাসিক অথবা ত্রৈমাসিক পর্যালোচনার স্টেটমেন্ট পাঠাতে হবে। যাতে কাদের টাকা পাঠানো হয়েছে, কারা পেয়েছেন, এবং কারা পাননি সবটা একত্রে দেখা যায়।
এই ১৬ দফা নির্দেশ এখনই কার্যকর করতে হবে বলে জানিয়েছে অর্থ দফতর। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই অর্থ দফতরকে এমন কড়া নির্দেশিকা জারি করার নির্দেশ দিয়েছেন। ২০২৫ সালে রাজ্যে কোনও ভোটের নির্ঘণ্ট না থাকলেও, সারা বছর উপভোক্তাদের নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিষেবা দিয়েই তিনি ২০২৬ সালে ভোট চাইবেন। আর ট্যাব-কাণ্ডে যে ভাবে সরকারি আধিকারিকদের কাজে ভুলত্রুটি ধরা পড়েছে, তাতেও সজাগ হয়ে রাজ্য মানুষের কাছে নিজের প্রকল্প পৌঁছে দিয়েই নিজের ভোটব্যাঙ্কটি নিশ্চিত করতে চাইছেন মমতা।