পুরভোটে সিপিএমের প্রচারে এ বার সিনেমার চরিত্ররা। গ্রাফিক্স - সনৎ সিংহ
কোভিড সংক্রমণের কারণে এ বারের পুরভোটে বড় সমাবেশ কিংবা মিছিল করা যাচ্ছে না। তাই সব রাজনৈতিক দলকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রচারের উপর জোর দিতে হচ্ছে। এই অবকাশে সিপিএম অভিনব কায়দায় তাদের প্রচার শুরু করেছে। সেই প্রচারে তুলে আনা হয়েছে জনপ্রিয় ইংরেজি, বাংলা, দক্ষিণী ও হি্ন্দি সিনেমার চরিত্রদের। সেই প্রচারে যেমন সামিল করা হয়েছে ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির উদয়ন পণ্ডিতকে, তেমনই হাজির করা হয়েছে জনপ্রিয় হিন্দি ছবি ‘কেশরী’-র ঈশ্বর সিংহকে। বাদ যাননি দক্ষিণী সুপারস্টার রজনীকান্তও। তাঁর ‘কাবালি’ ছবিকে গ্রাফিক্সে ব্যবহার করে ধার নেওয়া হয়েছে ছবির সংলাপও। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের ভোট নিজে দেওয়ার কথা বলছেন। ভোট লুঠ রোখার কথাও বলছেন নেটমাধ্যমের এই প্রচারে।
সূত্রের খবর, সিপিএমের ডিজিটাল টিম এই কাজটি করেছে। বিধানসভা ভোটের সময় তারা 'টুম্পা' গানের প্যারোডি করে প্রচার করেছিল। এ বারের পুরভোটে সিনেমার জনপ্রিয় চরিত্রদের ছবি দিয়ে তাদের সংলাপকে গ্রাফিক্সে ব্যবহার করে পুরভোটের প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। সর্বস্তরের ভোটারদের কথা মাথায় রেখে কোনও ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স তৈরি করা হয়েছে ইংরেজিতে। কোনওটি আবার বাংলা বা হিন্দিতে।
‘লগান’ ছবিতে আমির খান ভুবন নামে এক কৃষকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। চম্পানের গ্রামের কৃষক ভুবন নিজের ক্রিকেট দল গড়ে ব্রিটিশদের ক্রিকেট দলকে পরাস্ত করেছিল। সিপিএমের প্রচারে ভুবনের সেই লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে ভোটারদের প্রশ্ন করা হয়েছে, ভুবন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ‘লগান’ বন্ধ করার জন্য ক্রিকেট যুদ্ধে নেমেছিল। আপনি কী করবেন? শাসক দলের অপশাসন, বুথ লুঠ, ছাপ্পা ভোট, কাটমানির বিরুদ্ধে লড়াই করবেন? আবার ‘টাইটানিক’ ছবির অন্তিম দৃশ্যের ছবি দিয়ে একটি গ্রাফিক্স তৈরি করা হয়েছে। যেখানে নায়ক জ্যাক তার প্রেমিকা রোজকে বাঁচাতে ঠান্ডা জলে মৃত্যুবরণ করছে। তাতে লেখা হয়েছে, জ্যাক তার শেষ নিঃশ্বাস অবধি নিজের প্রেম রোজের হাত ছাড়েনি। আপনি আপনার প্রিয় শহরের জন্য কী করতে পারবেন? সেখানেও শাসক দলের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ করা হয়েছে।
বাংলা সিনেমার মহানায়ক উত্তম কুমারকেও নিজেদের প্রচারে ফিরিয়ে এনেছে সিপিএম। তাঁর অভিনীত ‘অগ্নীশ্বর’ ছবির চরিত্রকে ব্যবহার করেছে তারা। গ্রাফিক্সে অগ্নীশ্বর রূপী উত্তমের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, 'অগ্নীশ্বর ডাক্তার যাবতীয় অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন আর আর্তের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।' তার নীচে লেখা হয়েছে, 'আপনি?' এর পর করোনা অতিমারির সময় সিপিএমের রেড ভলান্টিয়ার্স ও শ্রমজীবী ক্যান্টিনের মতো উদ্যোগের কথা স্মরণ করানো হয়েছে। এই প্রচারেই উঠে এসেছেন, সত্যজিৎ রায়ের 'আগুন্তুক' ছবির মনমোহন মিত্র রূপী উৎপল দত্ত। আবার অমিতাভ বচ্চনের ‘কালিয়া’ ছবি-র স্মরণীয় সংলাপ ‘হম জাহা খড়ে হো যাতে হ্যায়, লাইন ওহি সে শুরু হতি হ্যায়’-র ব্যবহার করা হয়েছে সুচারুভাবে। এমন অভিনব প্রচার প্রসঙ্গে সিপিএমের ডিজিটাল দলের এক সদস্যের কথায়, ‘‘এমন প্রচার নিয়ে মানুষের দরজায় আমরা যেতে চাই, যা তাঁদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারে। আমাদের দেশে সিনেমা ও তার চরিত্ররা মানুষের স্মরণে থেকে যায়। সেই স্মরণিকাকেই আমরা ভোটের প্রচারে নেটমাধ্যমে ব্যবহার করছি।’’