সিবিআই আদালতের রায় খারিজ করে প্রাক্তন হকি খেলোয়াড়কে মুক্তি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
কলকাতা হাই কোর্টে ধাক্কা খেল সিবিআই। প্রাক্তন হকি খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে সিবিআই আদালতের রায় খারিজ করে দিলেন হাই কোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। শুক্রবার আদালত জানিয়েছে, যে অভিযোগের ভিত্তিতে ওই হকি খেলোয়াড়কে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তা খারিজ করা হল। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সিবিআইয়ের অভিযোগ কোর্টের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলা, দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশের হয়ে জাতীয় স্তরে এক সময় নিয়মিত হকি খেলতেন নন্দকিশোর রাই। পরে শুল্ক দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিক পদে চাকরি করেন তিনি। ২০১৩ সালে তাঁর কলকাতার বালিগঞ্জের বাড়ি থেকে ৩৬ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা উদ্ধার করে সিবিআই। তাদের অভিযোগ ছিল, ওই বছর নেপালে রাসায়নিক সার সরবরাহের সময় উৎকোচ হিসাবে ওই টাকা তিনি নিয়েছিলেন। সিবিআইয়ের আরও অভিযোগ ছিল, সরকারি পদকে কাজে লাগিয়ে বেআইনি ভাবে ওই টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
সেই মতো নন্দকিশোরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। প্রথমে দিল্লিতে সিবিআইয়ের মামলা হলেও, পরে তা কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। ২০১৮ সালে সিবিআই তদন্তের বিচারে আলিপুর আদালত ওই হকি খেলোয়াড়কে দোষী সাব্যস্ত করে। দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাঁর স্ত্রী বন্দনা রাইকেও। হকি খেলোয়াড়ের ছ’বছর এবং তাঁর স্ত্রীর আড়াই বছরের কারাবাসের নির্দেশ দেয় আদালত। নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা।
শুক্রবার সেই মামলার রায় ঘোষণা করে হাই কোর্ট। দম্পতির পক্ষের আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় সওয়াল করেন, ‘‘ঘুষ হিসাবে যে টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। এর পক্ষে জোরালো কোনও যুক্তি দেখাতে পারেনি সিবিআই। এমনকি ওই টাকা যে নন্দকিশোরেরই ছিল তা-ও প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।’’ পরে ওই আইনজীবী আদালতকে জানান, যে টাকা উদ্ধার হয়েছে, তা ওই হকি খেলোয়াড়ের স্ত্রী এবং মায়ের। কালো টাকা নয়। তাঁরা চিত্রশিল্পী। এই টাকার বৈধ লেনদেনের প্রমাণ আদালতে তুলে ধরেন তিনি।
সিবিআই তদন্ত নিয়ে আদালতে কয়েকটি প্রশ্ন তোলেন নন্দকিশোরের আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘‘কোনও শুল্ক দফতরের কর্মীর বাড়ি থেকে কালো টাকা উদ্ধারে এত ফাঁকফোকর থাকবে কেন। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, সিবিআইয়ের অভিযোগ সত্যি, তবে শুল্ক দফতরের দায়িত্ব প্রাপ্ত অন্য আধিকারিকদের ভূমিকা তদন্তে নীরব থাকল কেন।’’ সিবিআইয়ের পাল্টা যুক্তিকে সন্তোষজনক মনে করেনি হাই কোর্ট। তার প্রেক্ষিতেই নন্দকিশোর এবং বন্দনার আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।