সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।
শুধু তৃণমূলের আমলে দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা কেন? ক্যাগ রিপোর্টে প্রকাশিত বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়টি পরিসংখ্যান দিয়ে জানতে চাইলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বাম আমলেও তো ৪৬ হাজার নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ক্যাগ (কম্পট্রোলার অডিট জেনারেল অব ইন্ডিয়া)-এর রিপোর্টে। কই আমাদের সরকার তো তাদের নিয়ে কোনও অভিযোগ করেনি। ভদ্রতা কি আমাদের দুর্বলতা?’’
শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ব্রাত্য। তার আগেই অবশ্য বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী স্ত্রীর চাকরি নিয়ে তদন্ত শুরু হওয়ার প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সিপিএমকে হুঁশিয়ার করেই বলেছেন, ‘‘কাচের ঘরে বসে ঢিল ছোড়া উচিত নয়। স্কুলে নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে সিপিএম এখন আমাদের সরকারকে হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু এসএসসি তো আর ২০১১ সাল থেকে চালু হয়নি। সেটা ভুললে চলবে? ওরা কি বলতে চায়, ওদের আমলে কারও স্কুল কলেজে অনিয়মের চাকরি হয়নি? আমি ব্যক্তিগত ভাবেই অনেককে চিনি, যাঁদের এ ভাবে চাকরি হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল এক বারও এ নিয়ে কিছু বলেনি।’’ এর পরই ক্যাগের রিপোর্টের পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করেন ব্রাত্য। বলেন, ‘‘ক্যাগের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বাম আমলে ৪৬ হাজার অনিয়ম হয়েছিল। এটা কাল চর্চায় এসেছে। আমরা এ বার এটা সরকারি ভাবে খতিয়ে দেখব।’’
ক্যাগের এই রিপোর্ট ২০০৯-২০১০ সালের ভিত্তিতে করা বলে জানিয়েছেন ব্রাত্য। তখনও পশ্চিমবঙ্গে বাম সরকার। তবে পরিবর্তনের ডাকও তীব্র হয়েছে। পরের বছরই বিধানসভা নির্বাচনে জিতে বাংলায় নতুন সরকার গড়বে তৃণমূল। ব্রাত্য জানিয়েছেন, ক্যাগ-এর ওই রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল সেই সময়ে। তবে প্রকাশ্যে আসে ২০১৭ সালে। ব্রাত্য বলেছেন, ‘‘এই দুর্নীতি যে হয়েছে, তার অস্তিত্বই আমরা জানতাম না।’’
ক্যাগের ওই রিপোর্ট আর তার পরিসংখ্যান জানিয়েই ব্রাত্য সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। জানতে চেয়েছেন, ‘‘ক্যাগ ওই রিপোর্ট দেওয়ার পরও কেন কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়ে তদন্ত করেনি, তা জানি না। রাজ্যেও তখন কেন তদন্ত হয়নি, বলতে পারব না। এও বলতে পারব না, এখন কেন একপেশে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।’’
বৃহস্পতিবার নিয়োগ মামলার শুনানিতে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, সুজন এবং বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এক কালে চাকরির জন্য তদ্বির করছিলেন। তিনি দুর্নীতি করতে চাননি। এর পরেই বাম আমলে হওয়া নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বিতর্ক প্রকাশ্যে আসে। শুক্রবার তার পরেই সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। বাম আমলে হওয়া দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘তৃণমূল ভদ্রতা করে ১২-১৩ বছর কিছু বলেনি। তবে এ বার আমি সমস্ত রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে দেব। উনি যা বলবেন, তা-ই করব।’’