শিক্ষকদের অনেকের ধারণা, এক দিন জোড় সংখ্যার রোল নম্বর এবং অন্য দিন বিজোড় নম্বরের পড়ুয়াদের আসতে বলা হবে। ফাইল চিত্র।
স্কুলের সঙ্গে সঙ্গে ১৬ নভেম্বর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ও খোলার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কুল স্তরে আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের আসতে বলা হলেও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম থেকেই সব ছাত্রছাত্রীকে আসতে বলা হবে কি না, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। কলেজের অধ্যক্ষেরা সরকারি নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। তাঁদের অনেকের ধারণা, একসঙ্গে নয়, ছাত্রছাত্রীদের পর্যায়ক্রমে উপস্থিতির ব্যবস্থা হবে। এক দিন জোড় সংখ্যার রোল নম্বর এবং অন্য দিন বিজোড় নম্বরের পড়ুয়াদের আসতে বলা হবে।
এমন অনেক কলেজ আছে, যেখানে তিন শিফটে তিনটি কলেজের ক্লাস হয়। তাই দিন থেকে রাত, সব সময়েই কলেজ ভবনে পড়ুয়াদের যাতায়াত থাকে। এই সব ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। সুরেন্দ্রনাথ দিবা কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর মঙ্গলবার জানান, অন্য শিফটের দু’টি কলেজ মিলিয়ে তাঁদের ওই ভবনে পড়ুয়া সংখ্যা কমবেশি ছ’হাজার। তিনি বলেন, "আশা করছি, সরকার সব ছাত্রছাত্রীকে একসঙ্গে কলেজে আসতে বলবে না।" এখন দিবা কলেজে রয়েছেন প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম সিমেস্টারের পড়ুয়ারা। ইন্দ্রনীলবাবু বলেন, "আগে প্রথম সিমেস্টার, তার পরে দ্বিতীয়— এ ভাবে পড়ুয়ারা এলে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক কমবে। অথবা অনলাইন এবং অফলাইন— হাইব্রিড মোডে ক্লাস করানো যেতে পারে।"
বঙ্গবাসী কলেজেও তিন শিফটে তিনটি কলেজ চলে। বঙ্গবাসী দিবা কলেজের অধ্যক্ষা হিমাদ্রি ভট্টাচার্য চক্রবর্তী জানান, তাঁর কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ছ’হাজার। অন্য দু’টি কলেজ মিলিয়ে একই বাড়িতে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার পড়ুয়ার আসার কথা। দিবা কলেজে তাঁরা অনার্সের সব পড়ুয়াকে নিয়ে একসঙ্গে ক্লাস করতে পারবেন। কারণ, ক্লাসরুমগুলি অনার্সের পড়ুয়া-সংখ্যার তুলনায় বেশ বড়। কিন্তু জেনারেল কোর্সের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রচুর। তাঁদের একসঙ্গে বসিয়ে ক্লাস করতে খুবই অসুবিধা হবে।
চিত্তরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলেন্দু চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, সরকার যদি একান্তই সব সিমেস্টারের ছাত্রছাত্রীদের আসার নির্দেশ দেয়, তা হলে দু'টি শিফটে ক্লাস নিতে হবে। নইলে দূরত্ব-বিধি মানা সম্ভব হবে না। ক্যানিং বঙ্কিম সর্দার কলেজের অধ্যক্ষ তিলক চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, সরকার সব পড়ুয়াকে কলেজে আসার নির্দেশ দিলে দু'টি শিফটে ক্লাস নিতে হবে। অন্যথায় দূরত্ব-বিধি লঙ্ঘিত হবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানান, তাঁরা সরকারি নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় এ দিন বলেন, "কোনও রকম পরিকল্পনা ছাড়া হঠাৎ এই ঘোষণায় ছাত্র-শিক্ষক সকলেই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। আমরা অনেক আগেই দাবি করেছি, ভাগে ভাগে পড়ুয়াদের আনা হোক। একসঙ্গে আনা হলে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাবে।"
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) সভাপতি পার্থিব বসু বলেন, "আমরা আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। এবং তা যথাযথ পরিকল্পনামাফিক খুলতে হবে।"
এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যের দাবি, শুধু মৌখিক প্রতিশ্রুতি নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে চাই স্পষ্ট সার্কুলার। উচ্চ ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইডের কারণে যাঁরা ‘ড্রপ-আউট’ হতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের শিক্ষার পরিসরে ফিরিয়ে আনতে হবে। পরিকাঠামো খাতে বাড়তি ব্যয় করতে হবে সরকারকে। চাই স্পেশাল স্টিমুলাস প্যাকেজ। পড়ুয়াদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য নজর দিতে হবে গণপরিবহণ ব্যবস্থাতেও। ডিএসও-র দাবি, শিক্ষার সব স্তরে ফি প্রত্যাহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সুস্পষ্ট পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করতে হবে সরকারকে।