Hindu Population Growth

সঙ্ঘের প্রশিক্ষণ শিবিরে হিন্দু জনসংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ শুভেন্দুর, প্রশ্ন উঠল পদ্মের প্রার্থী বাছাই নিয়েও

উলুবেড়িয়ার তাঁতিবেড়িয়ায় ১ এবং ২ মার্চ আরএসএস ‘সমন্বয় বর্গ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দু’দিনের এই কর্মসূচি আসলে আরএসএস শীর্ষ নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে সহযোগী সংগঠনগুলির জন্য ‘প্রশিক্ষণ শিবির’।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৭:৩০
Share:
Suvendu raises concern over low growth rate of Hindu population in Bengal at RSS’s coordination camp

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করেছেন, তিনি হিন্দুদের ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছেন। অন্য কারও ভোটে নয়। ২০২৬ সালের ভোটে জিততে হলে আর ৫ শতাংশ ‘হিন্দু ভোট’ বেশি পেতে হবে বলেও গত কয়েক সপ্তাহে একাধিক মঞ্চ থেকে তিনি মন্তব্য করেছেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) ‘সমন্বয় বর্গে’ গিয়ে সেই তত্ত্বকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন শুভেন্দু। আহ্বান করলেন শুধু হিন্দু ভোট নয়, হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধিরও।

Advertisement

উলুবেড়িয়ার তাঁতিবেড়িয়ায় ১ এবং ২ মার্চ আরএসএস ‘সমন্বয় বর্গ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দু’দিনের এই কর্মসূচি আদতে আরএসএস শীর্ষ নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে বিজেপি-সহ প্রত্যেকটি সহযোগী সংগঠনের জন্য ‘প্রশিক্ষণ শিবির’। সঙ্ঘ পরিবারের ছাতার তলায় থাকা ৫৬টি সংগঠনের মধ্যে ৩৬টি পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয়। প্রত্যেকটির প্রতিনিধি হাজির ছিলেন প্রশিক্ষণ শিবিরে। বিজেপির প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন সুনীল বনসল, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ-সহ প্রায় ২০ জন। এঁদের সকলকে ‘প্রশিক্ষণ’ দেওয়ার জন্য ছিলেন আরএসএসের দুই সহ সরকার্যবাহ রামদত্ত চক্রধর এবং অরুণ কুমার। দু’দিনের শিবিরে মত বিনিময়ের অবকাশও ছিল। সেই মত বিনিময়ের সময় রাজ্য বিজেপির প্রার্থী বাছাই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

শুভেন্দুর উদ্বেগ

Advertisement

শনিবার শিবিরের প্রথম দিন আরএসএস নেতৃত্বের উপস্থিতিতে ঘণ্টা দেড়েকের মতবিনিময় সত্র আয়োজিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সেখানে আলোচনার সময় শুভেন্দু রাজ্যে হিন্দু জনসংখ্যার আশাপ্রদ বৃদ্ধি না হওয়া নিয়ে মন্তব্য করেন। আরএসএস সূত্রের খবর, রাজ্যে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমছে বলে শুভেন্দু মন্তব্য করেন। তাঁর বক্তব্য, মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের চেয়ে কমলেও হিন্দুদের ক্ষেত্রে সেই হারের হ্রাস অনেক বেশি। হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার নানা কারণও শুভেন্দু উল্লেখ করেন। তার মধ্যে অন্যতম, হিন্দু তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিয়ে না করা এবং লিভ-ইনের প্রবণতা বৃদ্ধি, অনেক দম্পতির মধ্যে সন্তানের জন্ম দেওয়ার অনিচ্ছা এবং অনেকের একটি মাত্র সন্তান থাকা। আরএসএস নেতৃত্ব শুভেন্দুর উদ্বেগের সঙ্গে সহমতও হন। সঙ্ঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে যে বার্তা দিয়েছিলেন, তা নতুন করে শোনানো হয় তাঁতিবেড়িয়ার প্রশিক্ষণ শিবিরে।

‘সমন্বয় বর্গ’ সেরে ফেরার পথে ‘ঐক্যের’ ছবি? ধাবায় একসঙ্গে জলযোগ বিজেপি নেতৃত্বের। —নিজস্ব চিত্র।

বিজেপির প্রার্থী বাছাই

পরের বছরই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। আরএসএস শীর্ষ নেতৃত্ব ভোট বা রাজনীতি নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু রবিবার দুপুরের ‘প্রশ্নোত্তর পর্বে’ সঙ্ঘ পরিবারের ছাতার তলায় থাকা অন্য একটি সংগঠন নির্বাচন প্রসঙ্গে সরাসরি বিজেপির প্রার্থী বাছাই নিয়েই মূলত প্রশ্ন তোলে। উদাহরণ হিসেবে এক প্রার্থীর নাম উল্লেখ করেন প্রশ্ন করা হয়, এ বারেও কি বিজেপি প্রার্থীদের নামঘোষণা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখবে? এবং শেষে এমন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে, যাঁর পরাজয় অনিবার্য?

আরএসএস নেতৃত্ব এ নিয়ে আলোচনা এগোতে দেননি। তবে বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে, বিজেপির প্রার্থী বাছাইয়ের ‘দায়’ আরএসএস নেবে না। নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়, প্রত্যেকটি সহযোগী সংগঠনই স্বাধীন। তাঁদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত তাঁরাই নেন। বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা চলে। কিন্তু কোনও সহযোগী সংগঠন তাদের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয় নিয়ে পরামর্শ না-চাওয়া পর্যন্ত আরএসএস তাতে হস্তক্ষেপ করে না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না এগনোয় উপস্থিত বিজেপি নেতৃত্বের ‘অস্বস্তি’ বাড়েনি। কিন্তু বিজেপির প্রার্থী বাছাই নিয়ে সরাসরি সঙ্ঘ পরিবারের অন্দরমহল থেকে প্রশ্ন ওঠায় বিজেপি নেতৃত্বের উপরে ‘চাপ’ বাড়ল।

মতান্তর ও মনান্তর

সরাসরি রাজনৈতিক কথা না বললেও সঙ্ঘ নেতৃত্ব বার বার ‘ঐক্যবদ্ধ লড়াই’-এর বার্তা দিয়েছেন। এক সহ-সরকার্যবাহের বার্তা, সংগঠনের মধ্যে বা সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে ‘মতান্তর’ হলেও ‘মনান্তর’ যেন না হয়। বাংলায় ঐক্য কেন জরুরি, তা-ও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। তবে প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক মন্তব্য এড়িয়ে। দেশের তিনটি অঞ্চলে প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা তিনি উল্লেখ করেন। এক, জম্মু-কাশ্মীর ও পঞ্জাব। দুই, কেরল ও তামিলনাড়ু। তিন, পশ্চিমবঙ্গ। এই তিন অঞ্চলে এখনও সঙ্ঘ পরিবারকে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পাশাপাশিই জানান, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি যেমন, তাতে এই প্রতিকূলতা অবিলম্বে কাটানো জরুরি। মহাকুম্ভের ‘সাফল্যে’র প্রসঙ্গ টেনে তাঁর বার্তা, বঙ্গবিজয় না হওয়া পর্যন্ত সঙ্ঘ ‘পূর্ণকুম্ভের আনন্দ’ অনুভব করতে পারবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement