বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে একটি ‘পলাতক দল’। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই মন্তব্য করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। মেনে নিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে একটি দ্বন্দ্ব এবং ভুল বোঝাবুঝির মেঘ রয়েছে। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
ভারত সংক্রান্ত প্রশ্নে ইউনূস বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এবং ভারতের পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই ভাল। এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভাল না থেকে উপায় নেই। ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা পরস্পরের উপর নির্ভরশীল দু’টি দেশ। তাই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে বিচ্যুত হতে পারব না।’’ শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। দ্বন্দ্বের কথা মেনে নিয়ে ইউনূস বলেন, ‘‘ভারত এবং বাংলাদেশের মাঝে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। আমি এগুলিকে বলি মেঘ। মূলত অপপ্রচার থেকে এই মেঘ এসেছে। কারা সেই অপপ্রচার করবে, সেটা অন্য কেউ বিচার করবেন। কিন্তু অপপ্রচারের ফলে দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছি।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম সপ্তাহেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়ে গিয়েছিল, জানিয়েছেন ইউনূস। ভারত সরকারের সঙ্গে তাঁর সরকার সব সময় যোগাযোগ রাখছে। দুই দেশের মধ্যে বড় কোনও সমস্যা নেই বলেই দাবি করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা।
ইউনূস আগেও দাবি করেছিলেন, একদল মানুষ বাংলাদেশে অশান্তি করে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি কলুষিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘শয়তানের খোঁজ অভিযান’ শুরু করেছিল। মূলত হাসিনার সমর্থক, আওয়ামী লীগের সদস্যেরাই এই অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন। পূর্বতন সরকার এবং হাসিনার দলকে কটাক্ষ করে ইউনূস বলেছেন, ‘‘একটা পলাতক দল। তাদের নেতৃত্ব দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। দেশটাকে অস্থিতিশীল করার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। মাঝেমাঝেই ঘোষণা করছে, বক্তৃতা দিচ্ছে। মানুষ এতে উত্তেজিত হচ্ছেন। তাদের দিক থেকে সবসময়েই একটা হুমকি আসছে।’’ আওয়ামী লীগকে কি নিষিদ্ধ করা হবে? ইউনূস বলেন, ‘‘এই দেশে থেকে কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। তবে যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিচার হবে।’’
গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশে গণআন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। তার পর তিনি ভারতে চলে এসেছিলেন। তাঁর প্রত্যর্পণ চেয়ে ভারত সরকারকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। এখনও তার উত্তর দেয়নি নয়াদিল্লি। হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ভারত একাধিক বার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ফলে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। সাক্ষাৎকারেও সে কথা মেনে নিলেন ইউনূস।