নিয়োগ দুর্নীতিতে শুভেন্দু অধিকারীর যোগ আছে বলে অভিযোগ তুললেন কুণাল ঘোষ। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতির জেরে চাকরি গিয়েছে, এমন ৫৫ জনের তালিকা তুলে ধরে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেছিলেন, এঁদের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর যোগ আছে। যে ঘটনার প্রেক্ষিতে মানহানির আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু। পূর্ব মেদিনীপুরের সেই ৫৫ জনের মধ্যে রয়েছেন সঞ্জীব সুকুল, সায়ন্ত বেরা, সুমিত দাসেরা। যদিও নন্দীগ্রামের অনুষ্ঠানে এ দিন শুভেন্দু প্রশ্ন করেছেন, ‘‘প্রমাণ করতে পারবেন উনি (সঞ্জীব সুকুল) আমার আত্মীয়?’’ কুণালের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আমরা চাই তদন্ত হোক।’’
এই নামগুলির মধ্যে সঞ্জীবের নাম নিয়েই চর্চা সব থেকে বেশি। এই সঞ্জীব ভগবানপুর-২ ব্লকের বাহাদুরপুর দেশপ্রাণ শিক্ষা নিকেতনে করণিক পদে চাকরি করতেন। থাকতেন কাঁথি শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়া বাড়িতে। আপাতত ওই ঘর তালা বন্ধ। বাহাদুরপুর দেশপ্রাণ শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক নিতাই চরণ পাত্র মানছেন, ‘‘২০১৮ সালে এই স্কুলে কাজ করছেন সঞ্জীব। তবে ১০ মার্চ থেকে আর তিনি স্কুলে আসেননি।’’ স্কুলের পাশেই বাড়ি স্থানীয় রুদ্রশেখর জানার। তিনিও বলছেন, ‘‘সঞ্জীব অতীতেও খেয়ালখুশি মতো আসতেন। অভিভাবকেরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে বারবার অভিযোগ জানিয়েছেন।’’
কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি তরুণ মাইতির অবশ্য দাবি, ‘‘দুইয়ে দুইয়ে চার স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সঞ্জীবকে জেরা করা উচিত।’’ সঞ্জীবের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে শুভেন্দু বলেন, ‘‘একটা চোর-ডাকাতের কথায় সঞ্জীব সুকুলকে দেখানো হচ্ছে। প্রমাণ করতে পারবেন উনি আমার আত্মীয়? আমার পার্টি করেন?’’
কাঁথির সায়ন্ত বেরা মাজিলাপুর হাই স্কুলে ২০১৮ সাল থেকে করণিক ছিলেন। প্রধান শিক্ষক আদিত্য গুড়িয়া জানালেন, গত শুক্রবারের পর থেকে সায়ন্ত আর স্কুলে আসেননি। সায়ন্তের বাবা তরুণ বেরা কাঁথির প্রাক্তন পুর-প্রতিনিধি। সৌমেন্দু পুরপ্রধান থাকাকালীনই পুর-প্রতিনিধি ছিলেন তরুণ। তার পর সৌমেন্দুর সঙ্গে বিজেপিতে এসেছিলেন। কিন্তু গত বছর পুরভোটের মুখে ফের পুরনো দলে ফিরে যান এবং তৃণমূলের টিকিটে লড়ে ভোটে হারেন। এখন তৃণমূলেই আছেন, দাবি তরুণের। তাঁর দাবি, ‘‘সায়ন্ত পরীক্ষা দিয়েই চাকরি পেয়েছিল। তার পর ঠিক কী ঘটেছে, জানি না।’’
সুমিত দাস নামে আরও এক জন চাকরি খুইয়েছেন বলে চর্চা চলছে। তিনি কাঁথি ১ ব্লকের নয়াপুট সুধীরকুমার হাই স্কুলের চাকরি করতেন। প্রধান শিক্ষক বসন্তকুমার ঘোড়ই মানছেন, ‘‘ওঁর চাকরি বাতিল সংক্রান্ত নির্দেশিকা এসেছে।’’ স্থানীয় অনেকেরই দাবি, শুভেন্দু মন্ত্রী থাকাকালীন জেলার এক প্রাক্তন বিধায়কের হাত ধরে চাকরি হয়েছিল সুমিতের। যদিও সুমিত মুখ খুলতে রাজি হননি।
কুণাল বলছেন, ‘‘অধিকারী-ঘনিষ্ঠতার কারণেই এঁরা চাকরি পেয়েছেন বলে আমাদের কাছে বারবার অভিযোগ আসছিল। আমরা চাই তদন্ত হোক।’’ বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিতের পাল্টা, ‘‘গোটা শিক্ষা দফতর জেলে রয়েছে। আগে নিজেদের মুখ আয়নায় ভালভাবে দেখুন, পরে অন্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত চাইবেন।’’