শুভেন্দু অধিকারী, অখিল গিরি। ফাইল চিত্র।
সমবায় আন্দোলনকে সামনে রেখে আগামী বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে ‘মেগা শো’ করবেন বলে ঘোষণা করলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার রামনগরেই একটি কালীপুজোর উদ্বোধনে গিয়ে এই ঘোষণা করেছেন তিনি। ‘অরাজনৈতিক মঞ্চ’ ব্যবহার করে তাঁর একের পর এক সভা ঘিরে জল্পনা ও বিতর্কের মধ্যেই এদিন নতুন ঘোষণা করেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেছেন, ‘‘রামনগর নিয়ে বলার জন্য অনেকে বলেছিলেন। কিন্তু যা বলতে হয়, তা করতে নেই। আর যা করতে হয়, তা বলতে নেই।’’ এর পরেই শুভেন্দু ঘোষণা করেন, ‘‘আগামী ১৯ নভেম্বর আমার একটি মেগা শো আছে রামনগরের আর এস ময়দানে। সমবায় সপ্তাহ নিয়ে। ওখানে অনেক সময় পাব। তখন বলব। বলার সুযোগও পাব।"
শুভেন্দুর এই ঘোষণার পরেই রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি মন্তব্য করেছেন, দলীয় পতাকা ছাড়া এমন চলতে পারে না। তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলের তরফে শুভেন্দু অধিকারীকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম (চরম হুঁশিয়ারি) দেওয়া হয়েছে। উনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট না করলে দলের তরফে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বলেই পরিচিত অখিল। শুভেন্দুর বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মন্তব্য করেছেন তিনি। গত ১০ নভেম্বর তৃণমূলের ‘নন্দীগ্রাম দিবস’ পালনের মঞ্চ থেকেও নাম না করে শুভেন্দুর সমালোচনা করেছিলেন অখিল। এবার অখিলের এলাকাতেই বড় সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শুভেন্দু। সেই সমাবেশে তৃণমূলের দলীয় পতাকা থাকবে কি না, তা নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। তবে ওই সভায় শুভেন্দু কী বলবেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা তৈরি হয়েছে। শুভেন্দু অখিলের বিধানসভা এলাকায় ‘মেগা শো’ করার ঘোষণা করতেই নতুন করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অখিল বলেছেন, ‘‘কেউ দলের ঊর্ধ্বে নয়। শুভেন্দু ওইদিন সভা করবেন বলে শুনছি। স্থানীয় বিধায়ক হিসেবে সেই সভার আয়োজকদের বলেছিলাম, মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি লাগাতে। কিন্তু তাঁরা জানিয়েছেন, মঞ্চে মমতার ছবি দেওয়া হবে না। এভাবে চলতে পারে না!’’
প্রসঙ্গত, গত ১০ নভেম্বর ‘নন্দীগ্রাম দিবস’-এ তৃণমূলের সভার আগেই দলের ব্যানার ছাড়া একটি ‘অরাজনৈতিক’ সমাবেশ করেছিলেন শুভেন্দু। সেখানে তিনি কিছু ‘ইঙ্গিতবহ’ মন্তব্যও করেছিলেন। তার কয়েক ঘন্টা পর আবার তৃণমূলের সভা থেকে নাম না করে শুভেন্দুকে ‘মিরজাফর’ বলা হয়েছিল। দলের সঙ্গে শুভেন্দুর দূরত্ব য়খন ক্রমবর্ধমান, তখন ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোর কাঁথির অধিকারী বাড়িতে গিয়েছিলেন। তৃণমূলের একাংশের মতে, প্রশান্তের সফরে ‘সহাবস্থানের বার্তা’-ই ছিল। কিন্তু শুভেন্দু তখন বাড়িতে ছিলেন না। শুভেন্দুর বাবা সাংসদ শিশির অধিকারীর সঙ্গে কথা বলে কলকাতায় ফেরেন প্রশান্ত। দলীয় সূত্রের খবর, শিশিরের ফোন থেকে তিনি শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলারও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শুভেন্দু-প্রশান্তের কথা হয়নি।
আরও পড়ুন: বঙ্গের নীলবাড়ি দখলের যুদ্ধে ‘অমিত-শস্ত্র’ প্রয়োগ করলেন শাহ অমিত
আরও পড়ুন: পাখির চোখ লোকসভা নির্বাচন, দেশ জুড়ে ১০০ দিনের যাত্রা শুরু করবেন নড্ডা
শনিবার দুপুরে রামনগরের বন্ধুমহল ক্লাবের কালীপুজোর উদ্বোধনে যান শুভেন্দু। উদ্বোধন মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি ভাল সময়ে কম আসি। তবে খারাপ সময়ে শুভেন্দুকে অবশ্যই পাশে পাবেন।’’ বাম আমলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এখন তো বড় পোস্টে আছি। রুলিং পার্টি ইত্যাদি। আগে সবাই ডাকত না। এখন সবাই ডাকে। একটা সময় রামনগরে লুকিয়ে, প্রকাশ্যে বহু কষ্টে হাজির থেকেছি। তখন বামশাসন ছিল। তা-ও সব সময় এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছি। তবে তখন অনেক বাহাদুরকে দেখা যায়নি!’’ স্থানীয় তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, ওই ‘কটাক্ষ’ শুভেন্দু করেছেন অখিলকে লক্ষ্য করেই।