শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের এক সপ্তাহ বাকি। সেই দিন নিজের এলাকাতেই থাকবেন এ রাজ্যের বিজেপি বিধায়কেরা। অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার থেকে শুরু করে স্থানীয় মন্দির সাজানো কিংবা অন্নভোগ বিতরণ— সব আয়োজনই করছে গেরুয়া শিবির। আর সেই সূত্রেই নন্দীগ্রামের সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকায় অর্থ বরাদ্দ করলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
নন্দীগ্রাম বিধানসভার অধীন মোট ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১টিতে জিতেছে বিজেপি। বাকি ছ’টিতে তৃণমূল। জানা গিয়েছে, বিজেপির জয়ী পঞ্চায়েতের জন্য ২০ হাজার টাকা করে, আর যেখানে বিজেপি পরাজিত সেই এলাকার জন্য ৩০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন শুভেন্দু। দল বা সঙ্ঘ নয়, এই অনুদান তাঁর ব্যক্তিগত। এই অনুদানে সব মিলিয়ে শুভেন্দুর পকেট থেকে যাবে চার লক্ষ টাকা। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তৃণমূলের দাবি, ইডি কেন তদন্ত করছে না?
শুভেন্দু যে অনুদান দেবেন, সেই তথ্য জানিয়ে বিজেপির নন্দীগ্রাম ২ মণ্ডল সভাপতি ধনঞ্জয় ঘোড়া বলছেন, ‘‘বিজেপির পঞ্চায়েত যেখানে আছে, সেখানে এই ২০ হাজার টাকায় ভোগ পরিবেশন ও মন্দির সাজানো হবে।’’ বিজেপি সূত্রে খবর, যে ছ’টি পঞ্চায়েতে বিজেপি হেরেছে, সেখানে বাড়তি অনুদান দেওয়া হয়েছে বাড়তি জনসংযোগের জন্যই।
বিজেপি সূত্রে খবর, রামমন্দির উদ্বোধনের দিন দল উদ্যোগী হয়ে নন্দীগ্রামের সব পঞ্চায়েত এলাকায় খিচুড়ি বা অন্নভোগ পরিবেশন করবে। এ জন্য দলের তরফে অর্থ সংগ্রহ হচ্ছে। তবে ব্যক্তিগত ভাবেও বিশেষ অনুদান দিচ্ছেন শুভেন্দু। অনুদানের অঙ্কে এই ‘আমরা-ওরা’য় অবশ্য ক্ষুণ্ণ পদ্ম-পঞ্চায়েতের একাংশ নেতা-কর্মী। তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘দলকে জিতিয়ে আমরা কি তবে অপরাধ করেছি!’’
তৃণমূল মনে করছে, ভোটের আগে এ ভাবে টাকা ছড়ানো হচ্ছে। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, ‘‘নন্দীগ্রামের বিধায়ককে ফুটবল-ক্রিকেট খেলার প্রধান অতিথি পদটাও টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এ-ও টাকা দিয়ে ভোট কেনার উদ্যোগ। ধর্মের আবেগ দিয়ে ভেদাভেদের চেষ্টা করছেন বিধায়ক।’’ কুণালের আরও খোঁচা, ‘‘শুভেন্দু কালো টাকার পাহাড়ে বসে আছেন। ইডি কেন তদন্ত করে দেখছে না?’’ শুভেন্দুর তরফে ব্যাখ্যা, ১৭টা এলাকারই সনাতনী মানুষ ভান্ডারা করবেন। সেই উপলক্ষে চাল-ডাল কেনা বাবদ ২০ হাজার টাকা করে ব্যক্তিগত ভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘দলের সব কর্মকাণ্ডে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য করে থাকেন। এ বারও তা-ই করছেন।’’ মেঘনাদের কথায়, ‘‘রামমন্দির প্রতিষ্ঠার দিনটি নন্দীগ্রামের সনাতন হিন্দুরা উদ্যাপন করবেন। সেই হিন্দু বিজেপি না তৃণমূল, তা বিচার না করে সবাইকে ভোগ পরিবেশন করা হবে। এটাই বিধায়কের ভাবনা।’’
রামমন্দির উদ্বোধনের দিন নন্দীগ্রামেই থাকবেন শুভেন্দু। সোমবার খেজুরির এক কর্মসূচিতে তিনি বলেন, ‘‘২২ জানুয়ারি রাজ্যে রামের নামে সুনামি বইবে। আমি আমার নন্দীগ্রামে ২০ হাজার লোকের জন্য ১ লক্ষ প্রদীপ কিনেছি। স্থানীয় কুমোরেরা পাঁচ টাকার জায়গায় তিন টাকা করে নিয়েছেন।’’