শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (বাঁ দিকে) এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে চলতি সঙ্কট কাটাতে সাহায্য করতে হবে, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে বলল সুপ্রিম কোর্ট। এর পাশাপাশি পারস্পরিক মতভেদ দূরে সরিয়ে রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির দিকে নজর দেওয়ার জন্য রাজ্য এবং রাজ্যপাল, দু’পক্ষকেই উদ্যোগী হতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত। শুক্রবার মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট মৌখিক ভাবে জানিয়েছে, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগের জন্য একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর এই কমিটি গঠন করে দেবে সুপ্রিম কোর্টই।
সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটির সদস্য মনোনয়নের জন্য রাজ্য, রাজ্যপাল এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)—তিন পক্ষকেই পাঁচটি নাম জানাতে বলেছে আদালত। সদস্যদের নাম জানার পর প্রত্যেক পক্ষ থেকে সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে তিন জনের সার্চ কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটিই স্থায়ী উপাচার্যের নাম প্রস্তাব করবে। রাজ্যপালের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে স্থগিতাদেশ চেয়েছিল রাজ্য। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। অর্থাৎ, আপাতত রাজ্যপাল মনোনীত অস্থায়ী উপাচার্যেরা পদে বহাল থাকছেন।
গত ২১ অগস্ট এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে, মামলার সব পক্ষকে নোটিস দিতে হবে। দু’সপ্তাহ পরে মামলাটির পরবর্তী শুনানি হবে। ওই দিন শীর্ষ আদালতের নির্দেশ ছিল, এই সময়ের মধ্যে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দু’পক্ষ আলোচনায় বসে সমাধানসূত্র বার করা যায় কি না দেখবে। তবে আংশিক সময়ের অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগ নিয়ে আচার্যের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না আদালত। আপাতত হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল থাকবে বলেও জানায় শীর্ষ আদালত।
শুক্রবারের শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি অভিযোগ করেন যে, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক রাজ্যের তরফে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানানো হলেও রাজ্যপাল তাতে সাড়া দেননি। অন্য দিকে, রাজ্যপালের আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত আদালতে রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জানান যে, প্রতি দিন রাজ্যপালকে প্রকাশ্যে অপমান করা হচ্ছে। তাই আলোচনার উপযুক্ত পরিবেশ নেই। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে শীর্ষ আদালত বলে, “মতপার্থক্য ভুলে এগোনো উচিত রাজ্য এবং রাজ্যপালের। আপনাদের ‘ব্যক্তিগত ইগো’র জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ছাত্রছাত্রীরা ভুক্তভোগী হচ্ছে।” এর পাশাপাশি রাজ্যপালকেও সঙ্কট কাটাতে সহযোগিতা করার পরামর্শ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। নবান্নের বক্তব্য ছিল, রাজ্যপাল যে পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেছেন, তা বৈধ নয়। রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর বা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই উপাচার্য নিয়োগে একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন আচার্য। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ামৃত্যু নিয়ে চাপানউতরের মধ্যে সেই প্রতিষ্ঠানে রাজ্যপালের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা নিয়ে রাজ্য-রাজভবন সংঘাত আরও বৃদ্ধি পায়। যদিও এর আগে কলকাতা হাই কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলায় ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য। তার পরই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নবান্ন।
উত্তরবঙ্গ, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ম্যাকাউট), কলকাতা, কল্যাণী, বর্ধমান, কাজী নজরুল, ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেন আচার্য। ওই উপাচার্যদের বেতন বন্ধ করে দেয় শিক্ষা দফতর। রাজ্যের যুক্তি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না আচার্য। রাজ্যের বক্তব্য ছিল, পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় আইন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নিয়ম মেনে ওই নিয়োগ করা হয়নি। ওই উপাচার্যদের নিয়োগ বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন অধ্যাপক সনৎকুমার ঘোষ। গত ২৮ জুন হাই কোর্ট মামলা খারিজ করে আচার্যের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়।