বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
উত্তরবঙ্গের ‘আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতি’র বিরুদ্ধে ওঠা ৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলায় এ বার রাজ্যকেই ৫ লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গত তিন বছর ধরে ওই আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছিল সিআইডি। কিন্তু তাদের তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে সিবিআই এবং ইডির হাতে সেই দুর্নীতির তদন্তভার দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
শুক্রবার সেই মামলার শুনানি ছিল। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আর্জি জানায় সিআইডি। তদন্তভার তাদের হাতেই তুলে দেওয়ার আবেদন করে রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থাটি। কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিআইডির আর্জি খারিজ করে দেন। সিবিআই আদালতে দাবি করে, আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরেও তাদের হাতে এই মামলার কোনও নথি তুলে দেয়নি সিআইডি। তার পরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে সমস্ত নথি তুলে দিতে হবে। যদি সিবিআইয়ের হাতে নথি তুলে না দেওয়া হয়, তা হলে স্বরাষ্ট্র সচিবকে ডেকে পাঠানো হবে।
এর পরই সিআইডির উদ্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “টাকা কারা আত্মসাৎ করেছে আমি জানি। যারা সাইকেল চড়ে ঘুরত, গরিব মানুষের টাকা মেরে তারা এখন গাড়ি চড়ছে। কোর্টের সঙ্গে খেলা হচ্ছে?” তিনি আরও বলেন, “আপনারা (সিআইডি) তো এত দিন তদন্ত করলেন। কেন কিছু হল না? তদন্তের অগ্রগতি হয়নি বলেই সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল। তিন দিনের মধ্যে সিবিআইয়ের হাতে নথি না দিলে স্বরাষ্ট্র সচিবকে ডেকে পাঠাব।”
পাশাপাশি সিবিআইকে ডেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এটা ৫০ কোটির দুর্নীতি। গরিব মানুষের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। গ্রামের মানুষ সব্জি বিক্রি করে ওই টাকা রেখেছিল। প্রতারণা করা হয়েছে।”
আবার ইডিকে তিনি বলেন, “যত বড় প্রভাবশালী হোক, গ্রেফতার করুন। এঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া উপায় নেই। দ্রুত তদন্ত শুরু করুন।”
গত অগস্টে কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে আর্থিক তছরুপের এই ঘটনার শুনানি হয়েছিল। সেই শুনানিতে মামলাকারীদের মধ্যে অন্যতম কল্পনা দাস সরকার অভিযোগ করেন, আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতি নামক সংস্থাটিতে ২১ হাজার ১৬৩ জন টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। কল্পনার দাবি, এত জন বিনিয়োগকারী মিলে মোট ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। টাকা তোলার সময় সংস্থাটি দাবি করেছিল, এই টাকা বাজারে বিভিন্ন জনকে ঋণ হিসাবে প্রদান করা হবে। কিন্তু পরে টাকা ফেরত পাওয়ার সময় হলে বিনিয়োগকারীরা দেখেন কোম্পানিটিই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তিন বছর ধরে তদন্ত করার পরেও সিআইডি খুঁজে বার করতে পারেনি, কাদের ওই টাকা ঋণ হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। মামলাকারী আদালতে অভিযোগ করেন, ঋণ যদি দেওয়া হত তা হলে ঋণগ্রহীতাদের নাম থাকত। কিন্তু সিআইডি গত তিন বছরে কারও নাম খুঁজে পায়নি। অর্থাৎ, টাকা দেওয়া হয়নি কাউকে, টাকা পাচার হয়ে গিয়েছে।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিআইডিকে ভর্ৎসনা করে বলেন, “এই আর্থিক তছরুপের ঘটনায় বিরাট প্রতারণাচক্র কাজ করেছে। প্রায় তিন বছর ধরে তদন্ত করার পরেও সিআইডি এই তদন্তের কিনারা করতে ব্যর্থ হয়েছে।” এর পরেই তিনি সিআইডির হাত থেকে সেই মামলা সরিয়ে সিবিআই, ইডিকে তদন্তভার দেন।