মুর্শিদাবাদের এক প্রধান শিক্ষক জানান, অধিকাংশ স্কুলভবনেই সকালে প্রাথমিক এবং বেলার দিকে উচ্চ প্রাথমিক ও অন্যান্য উঁচু শ্রেণির ক্লাস হয়। সেই সব স্কুলে সকাল ও বিকেল উভয় ক্ষেত্রেই পড়ুয়ার সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। ফলে সরকারি নির্দেশ মেনে উভয় বিভাগকে একটি ভবনে এনে একসঙ্গে ক্লাস করা সম্ভব নয়।
ফাইল চিত্র।
দারুণ দহনবেলায় ছাত্রছাত্রীদের যথাসম্ভব স্বস্তি দিতে সকালে স্কুলের সিদ্ধান্তেই থেমে যাচ্ছে না সরকার। প্রয়োজনে গরমের ছুটি এগিয়ে আনা হবে বলে মঙ্গলবার বিকাশ ভবনে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তবে তার আগে আগামী সপ্তাহের গোড়া পর্যন্ত আবহাওয়ার পরিস্থিতি দেখে নিতে চাইছে শিক্ষা দফতর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ, বুধবার শিক্ষা দফতরের কর্তা ও পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রচণ্ড গরমের জন্য স্কুলে গরমের ছুটি এগিয়ে আনা হবে কি না বা অন্য কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কি না, সেই সব বিষয়ে ওই বৈঠকে আলোচনার সম্ভাবনা আছে।
শিক্ষা শিবিরের বড় অংশে সকালে স্কুলের থেকেও আগাম গ্রীষ্মের ছুটির দাবি বড় হয়ে উঠেছে। শিক্ষা দফতরের কর্তাদের সঙ্গে এ দিন এই বিষয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকের আগে তিনি বলেন, “আবহাওয়া, বিপর্যয় মোকাবিলা-সহ বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে কথা বলে মুখ্যমন্ত্রীকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। সোম-মঙ্গলবার পর্যন্ত পরিস্থিতি একটু দেখে নিতে চাইছি। স্কুলের সময় এগিয়ে আনার নির্দেশ আগেই দিয়েছি। প্রয়োজনে গরমের ছুটিও এগিয়ে আনা হবে।” ব্রাত্যবাবুর বক্তব্য, দু’বছর অতিমারির কারণে স্কুল বন্ধ ছিল, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। এখন ছেলেমেয়েদের স্বাভাবিক পাঠাভ্যাস ফিরে আসছে। এই প্রেক্ষিতটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিকাশ ভবন সোমবার জানিয়েছিল, গরমের কারণে সব স্তরের স্কুলে সকালে ক্লাস শুরু করতে হবে। যদিও কবে থেকে তা হবে, তার কোনও নির্দেশিকা এ দিন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছিল, যদি কোনও স্কুল সকালে ক্লাস শুরু করতে না-পারে, তা হলে গরম থেকে ছাত্রছাত্রীদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে তাদের। সকালে স্কুল চালু হলেও পড়াশোনায় যাতে ঘাটতি না-হয়, দেখতে হবে সেটাও।
প্রশ্ন উঠছে, ক্লাসের সময় বা সংখ্যা না-কমিয়ে কী ভাবে ‘মর্নিং স্কুল’ চালানো সম্ভব? সাধারণ স্কুলে পঠনপাঠনের সময় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। শিক্ষক-শিক্ষিকারা দূরদূরান্তর থেকে আসেন। তাই অনেক জায়গাতেই মর্নিং স্কুল সাড়ে ৭টার আগে শুরু করা সম্ভব নয়। ফলে পূর্ণ সময় পঠনপাঠনের চালাতে হলে সাড়ে ৭টায় শুরু হয়ে স্কুল ছুটি হতে বেলা সাড়ে ১২টা-১টা বেজে যাবে। তা হলে তো পড়ুয়াদের সেই তীব্র দহনের মধ্যেই বাড়ি ফিরতে হবে! স্বস্তি-সুরাহা মিলবে কী করে?
কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকার বক্তব্য, উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হলেই শুরু হবে বিভিন্ন শ্রেণির ‘ফার্স্ট সামেটিভ’ বা প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন। চলবে ৭ মে পর্যন্ত। আবহাওয়ার উন্নতি না-হলে ৭ মে-র পরেই গরমের ছুটি দেওয়া হোক।
দুই দিনাজপুরের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে অনেক আগেই সকালে ক্লাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। মালদহ জেলা শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন বাসন্তী বর্মণ বলেন, ‘‘তীব্র গরমের কথা ভেবে আমরা সপ্তাহ দুয়েক আগেই সকালে স্কুল চালু করে দিয়েছি।’’
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু স্কুলের শিক্ষকদের মতে, সকালের স্কুলে পড়ুয়াদের সুবিধা হলেও যে-সব শিক্ষক দূর থেকে আসেন, সমস্যায় পড়বেন তাঁরা। হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউটশনের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যে-সব শিক্ষক ১০০-১৫০ কিলোমিটার দূর থেকে আসেন, তাঁদের পক্ষে সকাল ৬-৭টার মধ্যে স্কুলে পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব।’’ বীরভূম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান প্রলয় নায়েক বলেন, ‘‘স্কুলের ছুটির সময় ১১টার পরিবর্তে ১০টা করতে জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শকদের কাছে আর্জি এসেছে।’’ অন্য দিকে, নির্দেশিকা না-আসায় পশ্চিম বর্ধমানে এখনও পর্যন্ত মর্নিং স্কুল চালু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুনীতি সাঁপুই।
মুর্শিদাবাদের এক প্রধান শিক্ষক জানান, অধিকাংশ স্কুলভবনেই সকালে প্রাথমিক এবং বেলার দিকে উচ্চ প্রাথমিক ও অন্যান্য উঁচু শ্রেণির ক্লাস হয়। সেই সব স্কুলে সকাল ও বিকেল উভয় ক্ষেত্রেই পড়ুয়ার সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। ফলে সরকারি নির্দেশ মেনে উভয় বিভাগকে একটি ভবনে এনে একসঙ্গে ক্লাস করা সম্ভব নয়।