প্রেসিডেন্সি জেলে ক্রিকেট দলের সঙ্গে যুক্ত ‘কালীঘাটের কাকু’ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র বিরুদ্ধে সিবিআই এবং ইডির আনা অভিযোগগুলি বহুচর্চিত। কিন্তু প্রেসিডেন্সি জেলের ভিতরে এই ‘কাকু’রই যে আলাদা একটি জগৎ গড়ে উঠেছে, সেখানে যে তাঁকে দেখা যায় সম্পূর্ণ অন্য ভূমিকায়, তার খোঁজ খুব কম লোকেই রাখেন।
সে ভূমিকাও যে-সে ভূমিকা নয়। একেবারে ক্রিকেটারের ভূমিকা। ‘কাকু’ ক্রিকেট খেলেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি জেলের ক্রিকেট দলের ‘ক্যাপ্টেন’ও বটে! গত কয়েক দিন অবশ্য শারীরিক অসুস্থতার কারণে মাঠে নামতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন নিজের দলের ‘মেন্টর’। তাঁর দল মঙ্গলবার বিপক্ষকে চার উইকেটে হারিয়ে লিগের ফাইনালে উঠেছে। কাকতালীয় ভাবে, দীর্ঘ চেষ্টার পর সে দিনই ‘কাকু’কে নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে সিবিআই।
২০২৩ সালের মে মাসে ‘কালীঘাটের কাকু’কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তিনি প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন। সংশোধনাগারের ভিতরেই সেখানকার আবাসিকদের নিয়ে প্রতি বছর শীতকালে একটি ক্রিকেট লিগের আয়োজন করেন জেল কর্তৃপক্ষ। আইপিএলের ধাঁচে সেই লিগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘পিপিএল’ (প্রেসিডেন্সি প্রিমিয়ার লিগ)। অংশগ্রহণকারী দলগুলির নামও আইপিএলের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয়েছে। জেলের ক্রিকেট লিগের সেমিফাইনালে মঙ্গলবার মুখোমুখি হয়েছিল কেকেআর (কলকাতা নাইট রাইডার্স) এবং সিএসকে (চেন্নাই সুপার কিংস)। ‘কালীঘাটের কাকু’র দল কলকাতা তথা কেকেআর। তারা রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতে পৌঁছে গিয়েছে ফাইনালে।
সূত্রের খবর, খেলাধুলার দিকে বরাবরই ঝোঁক সুজয়কৃষ্ণের। বয়স ৬০ পেরিয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটের ২২ গজ নিয়ে তাঁর আগ্রহ কমেনি। গ্রেফতার হওয়ার আগে বেহালার বাড়িতে থাকাকালীন তিনি মাঠে নেমে ক্রিকেট খেলেছেন, তেমন খবর কারও কাছে নেই। কিন্তু এলাকার লোকেরা জানেন, সুজয়কৃষ্ণ পাড়ার ক্লাবে চলে যেতেন সন্ধ্যার পরেই। ক্রিকেটে তো আগ্রহ ছিলই। ক্যারম, তাস নিয়েও সময় কাটাতেন। প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে মনের মতো ক্রিকেট দল পান ‘কাকু’। তাঁর আগ্রহ এবং দক্ষতা বিবেচনা করে তাঁকেই দলের অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়। কিছু দিন খেলার পর অবশ্য তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জেলের হাসপাতালে ছিলেন দীর্ঘ দিন। তাঁর অনুপস্থিতিতে জেলের অন্দরের কেকেআর-কে নেতৃত্ব দিয়েছেন কাদের খান, যিনি পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির মামলায় কিছু দিন আগে ‘কাকু’কে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। কিন্তু তাঁকে হেফাজতে নিতে চেয়ে নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল সিবিআই। নিম্ন আদালত তাঁকে সশরীরে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছিল একাধিক বার। কিন্তু ‘কাকু’ অসুস্থ থাকায় তাঁকে হাজির করানো যায়নি। জেল কর্তৃপক্ষ আদালতে তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্টও জমা দেন। ‘কাকু’র জামিন এবং হেফাজত নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। অবশেষে মঙ্গলবার বিচার ভবনের বিচারক ‘কাকু’র চার দিনের সিবিআই হেফাজত মঞ্জুর করেন। রাতেই তাঁকে জেল থেকে বার করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। নিয়ে যাওয়া হয় জোকায় কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর রাত আড়াইটে নাগাদ তাঁকে নিজাম প্যালেসে সিবিআই হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আগামী চার দিন সেখানেই থাকতে হবে তাঁকে।
আপাতত প্রেসিডেন্সি জেল থেকে খনিক দূরে ‘কালীঘাটের কাকু’। তাঁকে ছাড়াই বুধবার পিপিএলের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। নির্ধারিত হবে ফাইনালে ‘কাকু’র কেকেআরের প্রতিপক্ষ। ফাইনাল ম্যাচ আপাতত নির্ধারিত ২৪ ডিসেম্বর। বড়দিনের আগের দিন। আর ‘কাকু’র সিবিআই হেফাজত ২১ তারিখ পর্যন্ত। হেফাজত শেষে তিনি জেলে ফিরে ফাইনালে তাঁর কেকেআর-কে ট্রফি জেতাতে পারবেন? অপেক্ষা এবং আশায় প্রেসিডেন্সির ‘নাইট’রা।