কলকাতার পুজোয় থিমের রমরমাতেও একডালিয়ার পুজোর চরিত্র কিছুতেই পাল্টাতে দেননি সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
এ বছরও দুর্গাপুজোয় মেতেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। চলে গেলেন কালীপুজোর দিনে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের চলে যাওয়ার এই দিনের মধ্যেও যেন একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একডালিয়া এভারগ্রিনের কর্মকর্তা গৌতম মুখোপাধ্যায় ফোন ধরে বললেন, ‘‘আজ থাক, আজ আর কিছু বলতে পারছি না!’’
একডালিয়ার পুজো আর সুব্রত যেন সমার্থক সেই ১৯৭০এর দশকের আগে থেকে। সুব্রত ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি হন ১৯৭০ নাগাদ। রাজ্যের তরুণতম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী বা দমকলমন্ত্রী ১৯৭২ নাগাদ। কিন্তু শুধু মন্ত্রিত্ব বা নেতাগিরি নয়, একডালিয়ার পুজোয ‘কাপ্তেনি’ও সুব্রতর মুকুটে একটি বিশিষ্ট পালক। একডালিয়া ও সুব্রতর টান নিয়ে নানা গল্প। এই সে-দিনও সুব্রত হাসতে হাসতে বলেছেন, ‘‘তখনকার কলকাতায় দমকলের জমকালো পুজোটা আমিই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। একডালিয়ার পুজোর জন্যই!’’
কেন? তখনকার দুর্গাপুজোর ‘উত্তমকুমার’ ভাস্কর রমেশচন্দ্র পালকে একডালিয়ার পুজোয় ছিনিয়ে আনা চাই-ই চাই, সুব্রতর। কিন্তু রমেশ পাল যে হাতে-গোনা কয়েকটা ঠাকুর করেন। সুব্রতর নিজের মুখে বলা সেই গল্প! তিনি সটান ‘সিএম’কে (সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়) গিয়ে বললেন, ধর্মনিরপেক্ষ দেশে দমকল কী করে দুর্গাপুজো করে! তা ছাড়া, পুজোর সময়ে তো বিপদও হতে পারে। দমকল পুজোয় ব্যস্ত থেকে যদি অনর্থ ঘটে! মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কথায় সায় দিলেন! দমকলের পুজো বন্ধ। সেই সুযোগে রমেশ চলে এলেন সুব্রতর পুজোয়।
প্রাণ দিয়ে নিজের পুজো করেছেন। ক্লাবের ছেলেদের সঙ্গে দেদার আড্ডা মারাও চাই সুব্রতর। রোজ রাত সাড়ে আটটা থেকে দশটা ক্লাবে সুব্রতকে থাকতে হবেই। কলকাতার পুজোয় থিমের রমরমাতেও একডালিয়ার পুজোর চরিত্র কিছুতেই পাল্টাতে দেননি। সুব্রত মুকুজ্জের বাঁধা বুলি, ‘আমি থিম নয়, পুজো করি!’