ফাইল ছবি
এমনিতেই স্থায়ী শিক্ষকের অভাব। যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যেও দু’জন সম্প্রতি উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে বদলি নিয়েছেন। ফলে এখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার কুমিরমারি স্কুলে ১১০০ পড়ুয়ার জন্য স্থায়ী শিক্ষক আছেন মাত্র চার জন। অগত্যা আংশিক সময়ের শিক্ষক খুঁজতে ওই স্কুলের কর্তৃপক্ষ সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়েছেন। শূন্য পদের সংখ্যা থেকে আবেদনের সবিস্তার পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে সেই বিজ্ঞাপনে।
আংশিক সময়ের শিক্ষক খুঁজতে সোশ্যাল মিডিয়া বা সমাজমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেকেই বিস্মিত। শিক্ষা শিবিরের একাংশ অবশ্য শিক্ষকের আকালের সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেন, একেই তো স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। তার উপরে বদলির উৎসশ্রী পোর্টাল চালু হওয়ায় তার মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকা থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কার্যত দল বেঁধে শহরে পাড়ি দিতে শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে বেশির ভাগ গ্রামীণ স্কুলই শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। বাধ্য হয়ে নিজেদের খরচেই আংশিক সময়ের শিক্ষক জোগাড় করতে বাধ্য হচ্ছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ।
কুমিরমারি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রণয় মণ্ডল বলেন, “আমাদের এখানে এমনিতেই শিক্ষকের বহু পদ শূন্য ছিল। তার উপরে উৎসশ্রীর মাধ্যমে দু’জন শিক্ষক বদলি নিয়েছেন। বাধ্য হয়েই আংশিক সময়ের শিক্ষক চেয়ে বিজ্ঞাপন দিতে হল। আংশিক সময়ের শিক্ষক ছাড়া স্কুলের পঠনপাঠন চলবে কী ভাবে?” প্রণয়বাবু জানান, বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল ও বিজ্ঞানের শিক্ষক দরকার। তিনি বলেন, “স্কুলের তহবিল থেকে বেতন দেওয়া হয়। স্কুল থেকে অবসর নেওয়া শিক্ষকেরা বা স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্রদের কেউ কেউ যদি একটু সময় বার করে নামমাত্র বেতনে পড়িয়ে যেতে পারেন, সেই অনুরোধ করব।”
অনুরূপ সমস্যায় ভুগছে নামখানার একটি স্কুলও। সেখানকার প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রনীল প্রধান জানান, তাঁদের স্কুলে ১৬টি শিক্ষকপদ খালি। ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান ও কলা শাখা খোলা হলেও বিজ্ঞান শাখায় এখনও পর্যন্ত কোনও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। অঙ্কের কোনও স্থায়ী শিক্ষক নেই ২০০১ সাল থেকে। আট জন আংশিক সময়ের শিক্ষককে বেতন দিতে মাসে ২৩ হাজার টাকা খরচ হয়। আংশিক সময়ের আরও শিক্ষক চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরাও। ইন্দ্রনীলবাবুর আক্ষেপ, “শিক্ষকই যদি নিয়োগ করা না-হয়, তা হলে স্কুলে বিজ্ঞান শাখা চালু করে কী লাভ হল?’’
প্রশ্ন রয়েছে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন জোগানোর বিষয়েও। বিভিন্ন স্কুল-কর্তৃপক্ষ জানান, ভর্তির সময় অভিভাবকদের কাছ থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু ‘ডোনেশন’ নেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে শুভানুধ্যায়ীরাও দেন। গ্রামাঞ্চলের অনেক স্কুল গাছের নারকেল ও ডাব বিক্রি করে কিছু টাকা পায়। কখনও বা স্কুলের জলাশয় লিজ়ে দেওয়া হয়। এ ভাবেই স্কুলের তহবিল তৈরি করে সেখান থেকে বেতন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা কত দিন টিকতে পারবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ না-হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়বে।’’ পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ না-করে কেন উৎসশ্রী পোর্টাল খুলে বদলি শুরু হল, উঠছে সেই প্রশ্ন।
রাজ্যের শিক্ষা দফতরের কর্তারা অবশ্য উৎসশ্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ মানতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, উৎসশ্রী পোর্টালে শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা আছে। তবে গ্রাম ও শহরের স্কুলে সাম্য-সামঞ্জস্য বজায় রাখার দিকেও নজর আছে সরকারের।