ফাইল চিত্র।
প্রায় সাড়ে চার বছর আগেকার পরিকল্পনায় সরকারি হাসপাতালের অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকায় ব্যাপক রদবদল করেও প্রশ্ন বা বিতর্ক এড়ানো গেল না। ক্যানসারের কিছু অত্যন্ত দামি ওষুধ-সহ অনেক অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ ‘অত্যাবশ্যক’ তালিকার বাইরে থাকায় সমালোচনা হচ্ছে। আবার তালিকায় ক্যানসার, ডায়েরিয়া বা ডায়াবেটিসের ওষুধের পরিবর্তে রিউমেটোলজি বা এন্ডোক্রিনোলজির ওষুধ বেশি রাখার কারণ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দিয়ে তালিকা পরিমার্জনের আবেদনও জানিয়েছে।
গত ৫ জুলাই প্রকাশিত ওই তালিকায় বলা হয়েছে, সব ধরনের ‘এসেনশিয়াল ড্রাগ’ বা অত্যাবশ্যক ওষুধ সর্বস্তরের হাসপাতালে থাকবে না। সব চেয়ে বেশি অত্যাবশ্যক ওষুধ থাকছে এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগ রয়েছে, এমন মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে। সেখানে অত্যাবশ্যক ওষুধের সংখ্যা হয়েছে ৯২১। আর সব চেয়ে কম অত্যাবশ্যক ওষুধ থাকছে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্তরে। সেখানে ওষুধের সংখ্যা ঠিক হয়েছে ৮৫।
ওষুধের তালিকায় রদবদলের পরিকল্পনা প্রথমে নেওয়া হয় ২০১৭ সালের অক্টোবরে। ২০২১-এর নভেম্বরে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ব্লক ও গ্রামীণ হাসপাতালের স্তর পর্যন্ত ওষুধের একটা প্রাথমিক তালিকা ঠিক করে দেওয়া হয়। তার প্রায় সাত মাস পরে, চলতি বছরের ৫ জুলাই বিভিন্ন স্তরের সরকারি হাসপাতালে অত্যাবশ্যক ওষুধের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অত্যাবশ্যক ওষুধের নতুন তালিকায় প্রায় ৯৩০ ধরনের ওষুধ রয়েছে। আগে এই সংখ্যা ছিল ১১০০-র মতো। তবে তালিকায় হেমাটোলজি, রিউমেটোলজি, এন্ডোক্রিনোলজির মতো ‘সুপার স্পেশালিটি’ বিভাগের বিপুল সংখ্যক ওষুধ ঢোকানো হল এই প্রথম। হেমাটোলজিতে ১৬টি, এন্ডোক্রিনোলজির ১৭টি এবং রিউমেটোলজির ১২টি নতুন ওষুধ এই প্রথম সরকারি অত্যাবশ্যক তালিকার অন্তর্ভুক্ত হল। চোখ, কার্ডিয়োলজি, সাইকিয়াট্রি, নিউরোলজি, ক্যানসার, ত্বক, কিডনির বেশ কিছু ওষুধ এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয় ইমিউনো সাপ্রেসিভ ড্রাগ, কিছু স্টেরয়েডও এই প্রথম তালিকায় এল।
এতে অবশ্য নতুন তালিকা নিয়ে সমালোচনা চাপা পড়ছে না। অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকা থেকে ডায়বেটিসের রোগীদের পেন ইনসুলিন, কিছু দামি ওষুধ, ডায়েরিয়া রোগীদের প্রোবায়োটিক-প্রিবায়োটিক, হিমোফিলিয়া রোগীদের ফ্যাক্টর-৭ এবং ফ্যাক্টর-৯, আলসার ও ফাঙ্গাল ইনফেকশনে ব্যবহৃত কিছু মলম ও ক্যাপসুল, ক্যানসারের কিছু অতি দামি ওষুধ বাদ যাওয়ায় বিতর্ক বেধেছে।
তবে স্বাস্থ্য দফতরের এক অধিকর্তা বলছেন, ‘‘বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রায় এক বছর ১০ মাস ধরে তালিকা নিয়ে ১০টির বেশি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা সব দিক বিচার করেই একমত হয়েছে। নীচের স্তরের হাসপাতালে অনেক ওষুধের অপব্যবহার হত। অনেক ওষুধ আবার কিছু সংস্থার একচেটিয়া ছিল বলে নানা ধরনের সমস্যা ছিল। কিছু চিকিৎসক কমিশনের চক্রেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। সব কিছু মাথায় রেখে নতুন তালিকা তৈরি হয়েছে। অনেক নতুন ওষুধ রাখা হয়েছে তাতে।’’
প্রশ্ন উঠেছে, ডায়বেটিস, ডায়েরিয়া বা ক্যানসারের ওষুধের বদলে হঠাৎ তালিকায় এত রিউমেটোলজি বা এন্ডোক্রিনোলজির ওষুধ রাখা হল কেন? রিউমেটোলজি বা এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগ আছে শুধু এসএসকেএম বা পিজি-র মতো হাতে গোনা কিছু সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেই। তা হলে কি এর পিছনে বিশেষ কিছু হাসপাতালের বিশেষ কিছু চিকিৎসকের প্রভাব কাজ করছে? স্বাস্থ্য দফতর নিরুত্তর।
তবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১৮ থেকে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫৩ ধরনের ওষুধ পাওয়া যেত। তা বাড়িয়ে ৮৫ করা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হেল্থ ওয়েলনেস সেন্টারে ওষুধের সংখ্যা ৫৫ থেকে বাড়়িয়ে করা হয়েছে ১০৯। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ কিছুটা কমছে। আগে সেখানে ২২৯ ধরনের ওষুধ পাওয়া যেত, এ বার থেকে মিলবে ১৭৩ ধরনের ওষুধ। তবে শয্যাযুক্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২২০ ধরনের ওষুধ পাওয়া যাবে। ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং গ্রামীণ হাসপাতালে ২৭১ ধরনের ওষুধ মিলত। সংখ্যা বেড়ে এ বার ৩১০ ধরনের ওষুধ পাওয়া যাবে সেখানে।