দলীয় বৈঠকে সাংসদ সৌমিত্রর নিন্দা দিলীপ ও শুভেন্দুর।
জন বার্লাকে বোঝানোর চেষ্টা চললেও সৌমিত্র খাঁয়ের ক্ষেত্রে কড়া মনোভাব বিজেপি-র। সৌমিত্রকে বোঝানো নয়, ধমক দিয়েই চুপ করাতে চাইছেন রাজ্য নেতারা। বিজেপি সূত্রে খবর, মঙ্গলবার দলের যুব মোর্চার ভার্চুয়াল বৈঠকে সৌমিত্রকে নিয়ে সরব হন অনেকেই। তাতে রীতিমতো নিন্দার সুর ছিল রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের গলায়। একই সুর ছিল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথাতেও। সকলেরই বক্তব্য, বারবার দলকে অস্বস্তিতে ফেলা বন্ধ করুন সৌমিত্র। যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি হলেও সংগঠনের ওই বৈঠকে হাজিরই ছিলেন না সৌমিত্র। বৈঠকের শুরুতে তাঁর খোঁজও নেন দিলীপ।
বেশ কিছুদিন দিল্লিতেই আছেন সৌমিত্র। বৈঠকে না থাকলেও এই খবর তিনিও পেয়েছেন যে নেতৃত্ব তারঁ তৈরি ‘জঙ্গলমহল বিতর্ক’ নিয়ে খুশি নয়। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমায় দিলীপদা বকেছেন। বড়রা শাসন করতেই পারেন। কিন্তু আমি দলকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইনি। ওটা যে আমার ব্যক্তিগত বক্তব্য ছিল, সেটাও আমি বলেছি। তৃণমূল সরকারের আচরণের জন্যই আমার ওই বক্তব্য।’’
সম্প্রতি আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা আলাদা উত্তরবঙ্গ রাজ্য গড়ার দাবি তুলে বিজেপি-কে অস্বস্তি ফেলেন। তা সামলানোর মধ্যেই নতুন বিতর্কের জন্ম দেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র। তিনি সোমবার বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার তো বটেই, চিরকাল জঙ্গলমহলের মানুষেরা বঞ্চিত হয়েছেন। এখন তো কলকাতা সংলগ্ন এলাকার বিধায়কদের নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা। তাঁরাই গোটা রাজ্য চালান। সেই কারণেই আলাদা জঙ্গলমহল রাজ্য দরকার।’’ এই মন্তব্য নিয়েই ক্ষুব্ধ দিলীপ মঙ্গলবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে বলেন, এ বার কড়া হাতে শাসন করা দরকার। তিনি এমনটাও বলেন যে, দল যখন বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্য সরকারের উপরে চাপ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন নানা রকম অপ্রয়োজনীয় কথা বলে সৌমিত্ররা ইস্যু তুলে দিচ্ছে তৃণমূলের হাতে। বিজেপি সূত্রে খবর, দলে এই ধরনের কাজ বন্ধ করা দরকার বলে ওই বৈঠকে মন্তব্য করেন শুভেন্দুও। নাম না নিলেও স্পষ্টতই সৌমিত্রর নিন্দা করেন তিনি।
মঙ্গলবার ভার্চুয়াল বৈঠকে তাঁর সম্পর্কে রাজ্য নেতারা যখন বিরূপ মন্তব্য করছেন, তখন দিল্লিতে সৌমিত্র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তবে সেখানে কী আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে রাজ্যের নেতারা কিছুই জানেন না। সৌমিত্র বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে নড্ডাজির সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে।’’ জঙ্গলমহল ইস্যুতে নড্ডা সৌমিত্রকে কিছু বলেছেন কিনা তা জানা যায়নি। তবে তেমন কিছু হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, নড্ডার সঙ্গে সাক্ষাতের পরে মঙ্গলবার রাতে সৌমিত্র ফেসবুক লাইভে জঙ্গলমহল রাজ্যের দাবি সম্পর্কে নিজের বক্তব্যের সমর্থনে কথা বলেন। সংবিধান হাতে নিয়ে বোঝান কী ভাবে আলাদা রাজ্যের দাবি তোলা যায়।
মঙ্গলবার দিল্লিতে নড্ডার বাসভবনে সৌমিত্র। নিজস্ব চিত্র
উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহল দুই আলাদা রাজ্যের দুই দাবিদারের ক্ষেত্রে আবার রাজ্য বিজেপি-র অবস্থান দু’রকম। বঞ্চনা নিয়ে আগে থেকে সরব বিজেপি। তাই বার্লার বক্তব্য ততটা বিপাকে ফেলেনি যতটা দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন সৌমিত্র। তাই বার্লার সঙ্গে নেতৃত্ব কথা বললেও সৌমিত্রর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হোক বলেও অনেক নেতা বৈঠকে মন্তব্য করেছেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, ‘‘সৌমিত্র দলকে বারবার বিপাকে ফেলেন। অথচ নিজের কাজ করেন না। কর্মীরা মার খাচ্ছেন আর তিনি দিল্লিতে বসে উল্টোপাল্টা কথা বলে চলেছেন।’’
সৌমিত্রকে নিয়ে বিজেপি-র অস্বস্তি অবশ্য নতুন কিছু নয়। সৌমিত্র কখনও ত্রিশূল বিলি করে, কখনও ভোটে জিতলে যুবকদের স্কুটি বিলির ঘোষণা করেছেন দলের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই। ভোটের আগে দল না চাইলেও মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসেবে দিলীপের নাম ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। তা নিয়ে প্রকাশ্যে তাঁর নিন্দা করেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এর পরে সম্প্রতি দিলীপের ডাকা বিষ্ণুপুরের সাংগঠনিক বৈঠকে হাজির থাকেননি সৌমিত্র। মুকুল রায় তৃণমূলে ফেরায় নিজে ন্যাড়া হবেন ঘোষণা করেও ধমক শুনেছেন নেতৃত্বের। এ বার ফের রোষের মুখে সৌমিত্র।