এসএসসি-র প্যানেল মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, এমন ১৮৪ জনের একটি তালিকার ৪৯ নম্বরে নাম ছিল অনন্যা মহাপাত্রের। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেন জলপাইগুড়ির এক শিক্ষিকা। রবিবার স্কুলে গিয়ে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন অনন্যা মহাপাত্র নামে ওই শিক্ষিকা।
জলপাইগুড়ির বানারহাট উচ্চমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে জীবন বিজ্ঞান পড়াতেন অনন্যা। স্কুল সূত্রে খবর, ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা জয়িতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রবিবার তিনি ইস্তফাপত্র দিয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে জয়িতা বলেন, ‘‘অনন্যা খুবই ভাল শিক্ষিকা ছিলেন। ইস্তফা দেওয়ার কারণ হিসাবে তিনি জানিয়েছেন, এসএসসি-র প্যানেল মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও ১৮৪ জনের চাকরি হয়েছিল। এমন তালিকা থেকে নাকি চাকরি পেয়েছেন তিনি।’’ জয়িতা আরও বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ ছিল, ৯ নভেম্বরের মধ্যে এ ধরনের তালিকাভুক্তেরা যদি নিজে থেকে ইস্তফা দেন, তবে একে শূন্যপদ হিসাবে দেখানো হবে।’’
প্রসঙ্গত, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-তে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এ নিয়ে একগুচ্ছ মামলা রুজু করা হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। এমনই একটি মামলায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে এসএসসি-র একটি তালিকা প্রকাশ হয়েছিল। এসএসসি-র প্যানেল মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, এমন ১৮৪ জনের ওই তালিকার ৪৯ নম্বরে নাম ছিল অনন্যার। এসএসসি-তে যাঁরা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের নিজে থেকেই ৯ নভেম্বরের মধ্যে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। তা না হলে ভবিষ্যতে তাঁরা কোনও সরকারি চাকরিতে বসতে পারবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি।
গোটা বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ অন্ধকারে ছিলেন বলে দাবি করেছেন জলপাইগুড়ির ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের হাতে এসএসসি, আদালত বা জেলা পরিদর্শকের কাছ থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি। নেটমাধ্যমে এ নিয়ে অনেক কিছু শুনেছি। তবে সে সবে গুরুত্ব দিয়ে তো আর সরকারি কাজ চলে না! আজ অনন্যা এবং তাঁর স্বামী স্কুলে এসে এ সব কাগজপত্র দেখালে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। অনন্যা খুব ভাল শিক্ষিকা ছিলেন। তবে আমি জেলা পরিদর্শক (ডিআই) বালিকা গোলের সঙ্গে কথা বলে তাঁর নির্দেশ মতো অনন্যার ইস্তফা গ্রহণ করি।’’
অনন্যার ইস্তফা দেওয়ায় স্কুলের পঠনপাঠনে সমস্যা হবে বলে মত জয়িতার। তিনি বলেন, ‘‘এতে স্কুলের ক্ষতি হল। এমনিতেই কম শিক্ষিকার জন্য স্কুল ধুঁকছে। আমার প্রার্থনা, দ্রুত আমাদের স্কুলের শূন্যপদ পূরণ করা হোক।’’ অন্য দিকে, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পায়েল মল্লিক বলেন, ‘‘অনন্যা বলেছেন, কোর্ট থেকে ওঁর কাছে নির্দেশ এসেছে। সে জন্য ইস্তফা দিচ্ছেন।’’