দুর্ঘটনায় মৃত পাপ্পু দাস। —নিজস্ব চিত্র।
গাড়ি চাপা দিয়ে এক যুবককে মারার অভিযোগ উঠল মালদহের মহকুমাশাসকের বিরুদ্ধে। শনিবার রাতের ওই দুর্ঘটনায় দুই শিশুও আহত হয়েছে। আহতেরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, মহকুমাশাসক মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ঘটনার পর পরই মহকুমাশাসকে আটকানোর চেষ্টা করে উত্তেজিত জনতা। মৃতের স্ত্রীর দাবি, মহকুমাশাসক সেই সময় গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। এর পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ইংরেজবাজারের পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের নাম পাপ্পু দাস (৩৫)। তাঁর বাড়ি মালদহ থানার সাহাপুর এলাকায়। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন তিনি। মৃতের পরিবারের দাবি, শনিবার রাতে সাহাপুরের শ্বশুরবাড়ি থেকে মোটরবাইকে করে স্ত্রী এবং শিশুকন্যাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পাপ্পু। পথে বাঁধ রোডে মালদহ ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁদের বাইকে ধাক্কা দেয় মহকুমাশাসকের গাড়ি। গুরুতর জখম হন পাপ্পু এবং তাঁর শিশুকন্যা। শনিবার এলাকায় একটি নৈশকালীন ফুটবল ম্যাচ দেখতে এসেছিল স্থানীয় শিশুরা। ঘটনার সময় তারা একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। সে সময় ওই শিশুদের মধ্যে এক জনকে ধাক্কা মারে মহকুমাশাসকের গাড়িটি। যার জেরে আহত হয় ওই শিশুটি। এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সকলকে উদ্ধার করে মালদহ মেডিক্যালে ভর্তি করেন স্থানীয়েরা। রবিবার ওই হাসপাতালে মারা যান পাপ্পু।
মৃতের স্ত্রী বলেন, ‘‘শনিবার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা নাগাদ স্বামী আর মেয়ের সঙ্গে বাইকে করে আমার বাবার বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। মালদহ কলেজের কাছে উল্টো দিক থেকে এসডিও-র স্করপিও গাড়ি এসে আমাদের ধাক্কা দেয়। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি। এসডিও মদ্যপান করে ছিলেন। ঘটনার পর সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি। আমি চাই, এসডিও-র শাস্তি হোক।’’
স্বামীর অকালমৃত্যুতে সরকারি সাহায্যের দাবি তুলেছেন স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী চলে গিয়েছেন। আমি কী করে বাঁচব? আমাদের যে কোনও ভাবে সাহায্য করতে হবে।’’ গোটা বিষয়টি পুলিশ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ পরিবারের।
শনিবার রাতে এলাকার বৃন্দাবনী মাঠে এক সংস্থার উদ্যোগে নৈশকালীন ফুটবল প্রতিযোগিতা ছিল। সে অনুষ্ঠানে বলিউড তারকা গোবিন্দা এসেছিলেন। ফলে এলাকায় ব্যাপক ভিড় ছিল। এই দুর্ঘটনার পর মহাকুমাশাসককে আটকানোর চেষ্টা করেন উত্তেজিত জনতা। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছে জনতাকে শান্ত করেন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ। তিনি বলেন, ‘‘এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এক কমবয়সি ছেলেকে হারালাম। দুর্ঘটনা তো কাউকে বলেকয়ে হয় না! তবে সরকারি আইনে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হচ্ছে। ওই গাড়িতে অনেকেই ছিলেন। এসডিও ছিলেন কি না, তা বলতে পারছি না। আমি বাইরে ছিলাম।’’
সংবাদমাধ্যমের সামনে কিছু না বললেও বেশ কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ঘটনার সময় মত্ত অবস্থায় ছিলেন মহাকুমাশাসক। জেলার পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘‘এই ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি। এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃতের ময়নাতদন্ত এবং আহতদের ইনজুরি রিপোর্ট করা হয়েছে। মহাকুমাশাসকের গাড়িও পরীক্ষার জন্য পরিবহণ দফতরের কর্মীদের দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় এলাকায় কোনও সিসিটিভি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। মহকুমাশাসক গাড়িতে ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’’