ফাইল চিত্র।
সিবিআইয়ের তরফে নারদ মামলায় নতুন করে হলফনামা পেশের আর্জি আসায় বুধবার তার বিরোধিতা করেছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত। আর বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত চার মন্ত্রী-নেতার অন্যতম আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা কলকাতা হাই কোর্টে পেশ করা সিবিআইয়ের হলফনামার ‘সত্যতা’ নিয়েই প্রশ্ন তুললেন। আদালতে তাঁর প্রশ্ন, সিবিআই হলফনামায় জানিয়েছে যে, চার জনকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ অ্যারেস্ট মেমোয় লেখা আছে, গ্রেফতার করা হয়েছে নিজ়াম প্যালেসে। কোনটি সত্যি? ‘‘হলফনামায় কাব্যিকতা চলে না। এখানে হয় মেমো সত্যি বলছে অথবা হলফনামা,’’ বলেন লুথরা।
হাই কোর্টে নারদ মামলার শুনানি চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ টন্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। বর্তমানে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা সওয়াল করছেন। ১৭ মে নিম্ন আদালত অভিযুক্ত চার নেতা-মন্ত্রীকে জামিন দিয়েছিল। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের হাঙ্গামার অভিযোগ তুলে সেই আইনি প্রক্রিয়া খারিজ করার আর্জি জানায় সিবিআই।
এ দিন সওয়ালের শুরুতেই লুথরা জানান, বিচারক ও বিচারপতিরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে বিচার করার শপথ নেন। সিবিআই হাঙ্গামার ভিত্তিতে আদালতের উপরে চাপ তৈরি করার যে-অভিযোগ এনেছে, সেটাকে ঠিক বললে বিচারকের নিরপেক্ষতা ও শপথ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, যা সত্যি হতে পারে না। তিনি এ কথাও বলেন যে, বাইরে গোলমাল হতেই পারে। কিন্তু বিচারের কাজে বাধা পড়তে পারে, এমন কখনওই হয়নি।
লুথরার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মুখোপাধ্যায় বলেন, বিচারক বা বিচারপতি কম্পিউটার নন। তাঁদেরও ভুল হতে পারে। পারিপার্শ্বিক ঘটনা তাঁদের উপরে প্রভাব ফেলছে, এটাও অসম্ভব নয়।
গত ১৭ মে নিম্ন আদালতের রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ চাইতে হাই কোর্টকে ই-মেল করেছিল সিবিআই। লুথরা আদালতে জানান, সিবিআই সে-দিন হাই কোর্টে মেল পাঠিয়েছিল বেলা ২টো ৩৫ মিনিটে। তার আগে সেই ই-মেল রাজ্যপাল ও অন্যান্য আইনজীবীর কাছে পাঠানো হয়েছিল। সিবিআই যে-জনবিশৃঙ্খলার কথা বলেছে, তা-ও খারিজ করে দেন লুথরা। তিনি জানান, সে-দিনের ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছে, নিজ়াম প্যালেসের পিছনের গেটে কোনও ভিড়ই ছিল না। আদালতে সেই ভিডিয়ো পেশের আর্জি উঠতেই তার বিরোধিতা করেন সলিসিটর জেনারেলক তুষার মেহতা।
লুথরার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সৌমেন সেন জানান, সিবিআইয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, সে-দিন বিশৃঙ্খলার জন্য অভিযুক্তদের আদালতে নিয়ে যাওয়া যায়নি। বিচারপতি টন্ডন বলেন, জামিন সংক্রান্ত বিষয় হলে এই বক্তব্য শোনা যেত। কিন্তু সাংবিধানিক বেঞ্চ কি এটা শুনবে? লুথরা আদালতে জানান, সে-দিন কোনও রকম কোভিড বিধি না-মেনেই মদন মিত্রকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দিকে কটাক্ষ ছুড়ে তিনি বলেন, “গ্রেফতারের কারণ দুর্বল হওয়ায় অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে পায়নি (সিবিআই)। তার দোষ জনতার ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে!”
এ দিন লুথরার সওয়ালেই শুনানি শেষ হয়ে যায়। আগামী মঙ্গলবার ফের এই মামলার শুনানি হবে।