শুক্রবার কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে মমতার সঙ্গে বৈঠকে কী আলোচনা হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি অখিলেশ। — ফাইল ছবি।
ইঙ্গিতটা গত সপ্তাহে অমেঠীতে গিয়েই দিয়েছিলেন। এ বার কি তারই প্রথম পদক্ষেপ! শুক্রবার কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বৈঠকে বসতে চলেছেন অখিলেশ যাদব। জল্পনা, অকংগ্রেসি জোট গড়ার কাজটা সেখান থেকেই শুরু হতে চলেছে। শুক্রবার কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে অবশ্য এই নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি অখিলেশ। জানিয়েছেন, মমতার বাড়ি যা কথা হবে, তা এখন বলা যাবে না। তবে বিজেপিকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি।
শুক্রবার অখিলেশ বলেন, ‘‘বিজেপি লাগাতার সংবিধান, গণতন্ত্রকে আঘাত করছে। বিপক্ষ যাতে সরব না হয়, সেই চেষ্টা করছে। আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব। কী কথা হবে, এখন বলতে পারব না।’’ মুখে কিছু না বললেও মমতার সঙ্গে বিজেপি বিরোধিতা নিয়েই যে কথা হতে পারে, তাঁরও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন অখিলেশ। তিনি বলেন, ‘‘চাইব উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি দেশ থেকে বিজেপি হটুক। উত্তরপ্রদেশে বহু নেতা মিথ্যে মামলায় জেলে। যেই দলকে বিজেপি ভয় পায়, তাদের ঘরে ইডি-সিবিআই পাঠিয়ে দেয়।’’
২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে মমতা তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার কথা জানিয়েছিলেন। যদিও সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তিনি জানিয়েছেন, আগামী লোকসভা ভোটে একক শক্তিতেই লড়বে তাঁর দল। তবে তাতে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী অকংগ্রেসি মঞ্চ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ভেস্তে গিয়েছে, তা অনেকেই মনে করছেন না। সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশও সম্ভবত তাঁদের মধ্যে এক জন। আর সে কারণেই শুক্রবার কলকাতায় এসে মমতার সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন তিনি। শনিবার কলকাতায় এসপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক রয়েছে। সেখানে অ-বিজেপি, অ-কংগ্রেস জোট নিয়ে অখিলেশ আলোচনা করতে পারেন বলে খবর। দলের একাংশ মনে করছে, সেখানে তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিতে পারেন, কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোটে আর থাকবে না তাঁর দল।
এ রকম যে করতে পারেন, তার ইঙ্গিত গত সপ্তাহে অমেঠীতে গিয়েই দিয়েছিলেন অখিলেশ। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, এত কাল যা করেছেন, আর তা করবেন না। গান্ধীদের শক্ত ঘাঁটি অমেঠী, রায়বরেলিতেও প্রার্থী দেবেন। অখিলেশ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘‘বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক মাথাদের নির্বাচিত করেও অমেঠী নিজের প্রাপ্য পায়নি। এ বার অমেঠীর মানুষ বড় হৃদয়ের এক জনকে নির্বাচিত করবেন। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এখানে উন্নয়ন করব।’’ জনগণকেও ‘ভিআইপি’-দের ভোট না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন।
২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে লড়েছিল মুলায়ম-অখিলেশের দল। সে বার ভরাডুবি হয় জোটের। তার পরেই রাহুলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে অখিলেশের। ক্রমে জোট ভেঙে বেরিয়ে আসেন অখিলেশ। যদিও তার পরেও ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে সনিয়া গান্ধীর কেন্দ্র রায়বরেলি, রাহুল গান্ধীর অমেঠীতে প্রার্থী দেয়নি এসপি। সৌজন্য রেখে মুলায়মের মইনপুরীতেও প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস। ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও অখিলেশের কেন্দ্র করহালে প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস। এ বার সেই সৌজন্যও অখিলেশ আর দেখাতে চাইছেন না বলে দলীয় সূত্রে খবর। আর এ সব বিষয়েই দলীয় কর্মসমিতির বৈঠকে আলোচনা করবেন।
এই নিয়ে আলোচনা হতে পারে কালীঘাটে মমতার বাড়িতেও। মমতার সঙ্গে অখিলেশের ঘনিষ্ঠতা গত কয়েক বছরে বেড়েছে। ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের সময় জয়া ভাদুড়ির মতো সাংসদকে তৃণমূলের জন্য প্রচারে পাঠিয়েছিলেন মুলায়মের পুত্র। ২০২২ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে সমাজবাদী পার্টির মঞ্চে দেখা গিয়েছিল মমতাকে। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে দেশের ৮টি বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা ‘বিরোধী দলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগানো’র অভিযোগ তুলেছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মমতা, অখিলেশ, অরবিন্দ কেজরীওয়াল, কে চন্দ্রশেখর রাও, শরদ পওয়ার তেজস্বী যাদব, উদ্ধব ঠাকরে, ফারুক আবদুল্লার সই করা সেই চিঠিতে কংগ্রেস, বাম এবং ডিএমকের কোনও নেতার সই ছিল না। মনে করা হচ্ছে, সেই সূত্র ধরেই শুক্রবার মমতার বাড়িতে বৈঠকে বসছেন অখিলেশ। সেখানেই তৈরি হতে পারে বিজেপি বিরোধী অকংগ্রেসি মঞ্চের রূপরেখা।