শোভন চট্টোপাধ্যায় ও রত্না চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
'নারায়ণ' বাড়ি ছেড়ে গেলেও, 'লক্ষ্মী' এই বাড়ি ছেড়ে যাবে না। বুধবার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন নিজেকে 'লক্ষ্মী' ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে 'নারায়ণ' বলে দাবি করলেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। বিজয়া দশমীর দিন সন্ধ্যায় বান্ধবী বৈশাখীর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। বাকযুদ্ধ চলেছে শোভন-রত্না-বৈশাখীর মধ্যে। বুধবার সব বিতর্ক ভুলে রত্না ব্যস্ত ছিলেন বাড়ির পুজো নিয়ে। পুজোর আচার পালনের মধ্যেই সম্মুখীন হন সংবাদমাধ্যমের। লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে ভোগ রাঁধা থেকে শুরু করে অঞ্জলি দেওয়া, সবতেই সক্রিয় উপস্থিতি ছিল রত্নার। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শোভন বৈশাখীকে সিঁদুর পরানোর জবাব হিসেবেই কী চট্টোপাধ্যায় বাড়ির লক্ষ্মীপুজোয় তাঁর এমন সক্রিয়তা?
জবাবে রত্না বলেন, ‘‘এই নতুন বাড়িতে আসার পর গত ২১ বছর ধরেই আমি লক্ষ্মীপুজোয় নিজের হাতে সব করে আসছি। আসলে আমিই তো এই বাড়ির মা লক্ষ্মী। শোভনবাবু আমাকে মা লক্ষ্মী করেই এই বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি এই বাড়িতেই রয়ে গিয়েছি। আর শোভনবাবু এখান থেকে চলে গিয়েছেন। নারায়ণ তো চলে গেছে, কিন্তু মা লক্ষ্মী এই ঘরেই থেকে গিয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বেহালার বাড়ি ছেড়ে গোলপার্কের এক বহুতলে এসে ওঠেন শোভন। সেই থেকে আর পর্ণশ্রীর বাড়িতে যাননি তিনি। আর পুত্র সপ্তর্ষি ও মেয়ে সুহানিকে নিয়ে বেহালার বাড়িতেই রয়েছেন রত্না।
বেহালা মহারাণী ইন্দিরা দেবী রোডের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোয় ব্যস্ত রত্না চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
বৈশাখীর নাম মুখে না আনলেও কৌশলে রত্না বলেন, ‘‘নতুন করে কাউকে কিছু বলার নেই। আমিই চট্টোপাধ্যায় বাড়ির বউ। আমি শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেককে নিয়ে পুজো করেছি। সবাই উপস্থিত হয়েছেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ভগাবনকে বলব, যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন আমি যেন শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে নিয়েই এই বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করে যেতে পারি।’’ শোভন তাঁকে ছেড়ে গেলেও তাঁর পরিবার যে এখনও রত্নার পাশেই রয়েছে, এমন মন্তব্য করে তাই বোঝাতে চেয়েছেন রত্না। তেমনই নাম না করে জবাব দিয়েছেন বৈশাখীকেও। এই মত রত্না-ঘনিষ্ঠদেরও।
উল্লেখ্য, যে বাড়িতে বুধবার ধুমধাম করে লক্ষ্মীপুজো করেছেন রত্না, সেই বাড়িটি আবার বান্ধবী বৈশাখীকে বিক্রি করে দিয়েছেন শোভন। ২৬ সেপ্টেম্বর বৈশাখী দাবি করেছিলেন, বেহালা পর্ণশ্রী ১৩৯বি, মহারানি ইন্দিরা দেবী রোডের বাড়িটির মালিক এখন তিনিই। বিভিন্ন মামলার আইনি খরচ চালাতে সমস্যা হচ্ছিল শোভনের। তাই বান্ধবী হিসেবে শোভনকে সাহায্য করতেই বাড়িটি কিনে নিয়েছেন তিনি। সঙ্গে শর্ত দিয়ে জানিয়েছিলেন, ওই বাড়ি থেকে রত্না ও সপ্তর্ষিকে চলে যেতে হবে। এবং মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে, তবেই বেহালার বাড়িতে থাকতে পারবেন শোভন-দুহিতা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর রত্না জানিয়েছিলেন, আইনগত ভাবেই ব্যবস্থা নেবেন। আর বুধবার সেই বাড়িতেই বেশ বড় পরিসরে লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করলেন বেহালা পূর্বের বিধায়ক।