দুয়ারে রেশন প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে রাজি নয় রেশন ডিলাররা। ফাইল চিত্র।
দুয়ারে দুয়ারে বা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে রেশন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। রাজ্যের রেশন ডিলারদের বিভিন্ন সংগঠন নিয়ে তৈরি জয়েন্ট ফোরাম অব ওয়েস্ট বেঙ্গল রেশন ডিলার্স-এর এমন ঘোষণায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে এই সরকারি পরিষেবা প্রকল্প নিয়ে। ডিলারদের সমস্যা বুঝতে এবং জটিলতা মেটাতে শীঘ্রই তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে খাদ্য দফতর, জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ।
মঙ্গলবার নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন হলে জয়েন্ট ফোরামের সম্মেলন ছিল। সেখানে উপস্থিত ডিলারদের পক্ষ থেকে এই প্রকল্প চালিয়ে যেতে নিজেদের অপারগতার কথা তুলে ধরা হয়। পাইলট প্রকল্প চালাতে গিয়ে কী কী ধরনের আর্থিক এবং পরিকাঠামোগত সমস্যার মধ্যে তাঁদের পড়তে হচ্ছে, সে কথাও বলেন রাজ্যের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিরা।
সম্মেলন থেকে ঘোষণা করা হয়, ডিলাররা যে যাঁর দোকান থেকে খাদ্যসাথী প্রকল্পের খাদ্য সরবরাহ করে যাবেন, কিন্তু দুয়ারে রেশন প্রকল্পের কাজ করবেন না তারা। জয়েন্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “আমাদের দোকানের কর্মচারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেশন দিয়ে আসতে রাজি হচ্ছেন না। কোভিড পরিস্থিতিতে কেউ প্রাণের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। আমরাও তাঁদের উপর চাপ দিতে পারি না। তা ছাড়া দুয়ারে রেশন প্রকল্পে যাঁরা বিনামূল্যে রেশন নেন, তাঁদের অনেকে পাড়ায় তা জানতে দিতে নারাজ। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরাই রেশন ডিলারদের বারণ করে দিচ্ছেন বাড়ি বা পাড়ায় গিয়ে রেশন দিয়ে আসতে। আরও কিছু কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের। এমন পরিস্থিতিতে এই প্রকল্পের কাজ করে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”
ডিলারদের অসুবিধার কথা এবং সিদ্ধান্তের কথা খাদ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছে জয়েন্ট ফোরাম। তার পরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য দফতর। খাদ্যমন্ত্রী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, “দু-একদিনের মধ্যেই আমরা রেশন ডিলারদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। তাদের সব সমস্যার কথা শুনব। তাঁরা অনেক সমস্যার কথাই আমাদের জানিয়েছেন। সব সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা হবে। তবে দুয়ারে রেশন প্রকল্পের কাজ কোনও ভাবেই থামানো যাবে না।”
সেপ্টেম্বর থেকে দুয়ারে রেশনের পাইলট প্রকল্প কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় চালু হয়ে গিয়েছে। ১৫ শতাংশ রেশন ডিলার গ্রাহকদের বাড়িতে বা পাড়ায় গিয়ে খাদ্য সরবরাহ করে এসেছেন। অক্টোবরে সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশ রেশন ডিলারকে পাইলট প্রকল্পের মধ্যে এনেছে খাদ্য দফতর। নভেম্বর মাস থেকে এই প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি চালু করার পরিকল্পনা।
প্রসঙ্গত, দুয়ারে রেশন প্রকল্পটি চালানোর জন্য রাজ্য সরকার ডিলারদের প্রতি কুইন্টাল খাদ্যশস্যের জন্য ৭৫ টাকা অতিরিক্ত কমিশন দিচ্ছে। খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাড়ি কিনতে ডিলারদের ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু তাতেও রাজি হচ্ছেন না রেশন ডিলাররা।