প্রতীকী ছবি।
বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে লৌহকপাটের আড়ালে। বিচার মিলছে না— এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রুপোলি পর্দাতেও প্রশ্ন ওঠে, ‘তারিখ পে তারিখ’ বা তারিখের পর তারিখ কত দিন চলবে? কেন চলবে? সেই বিচারের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার জন্য এ বার সরব হয়েছেন বাস্তবের বন্দিরা। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে ‘পিটিশন’ বা চিঠি লিখে যথাশীঘ্র বিচারের আবেদন জানিয়েছেন বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলের ২১৫ জন বিচারাধীন বন্দি।
নিয়ম অনুযায়ী ওই জেলের সুপার মারফত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে বন্দিরা লিখেছেন, ‘আমরা দুঃখিত ভাবে বিনয়ের সহিত জানাতে চাই যে, আমরা সংশোধনাগারে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি আছি। কিন্তু বহরমপুর, মুর্শিদাবাদের দ্বিতীয় স্পেশাল সেশনস কোর্টের অধীনে থাকা বিচারাধীন কেসগুলি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। আমরা শুধুই দীর্ঘ তারিখ ব্যতীত অন্য কিছুই পাচ্ছি না।’ বন্দিরা
লিখেছেন, বিচারের আশায় তিন মাস থেকে এক বছর অন্তর তাঁরা আদালতে যাতায়াত করছেন। কিন্তু কোনও রায় হচ্ছে না। এই ধরনের সমস্যার কথা এখনকার জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, জেলা জজের মতো উচ্চপদস্থ আধিকারিকদেরও জানানো হয়েছে। কিন্তু সুরাহা হয়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন বহরমপুর জেলের বন্দিরা।
বিচার প্রক্রিয়ার ‘দীর্ঘসূত্রতা’ নিয়ে বন্দি এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজন বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। গত মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে দমদম সেন্ট্রাল জেলে গোলমাল ও গুলিচালনার ঘটনার ক্ষেত্রেও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতাকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন অনেকে। তার সমর্থন মিলেছিল বন্দিদের বক্তব্যে। তাঁদের দাবি ছিল, জামিন দেওয়া হোক অথবা বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করা হোক। সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে বন্দিদের মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত লোকজন বলছেন, এ ভাবে দিনের পর দিন বিচার প্রক্রিয়া থমকে থাকলে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে।
তার দায় কারা দফতর তথা সরকারের উপরে বর্তাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জিত শূর। ‘‘বিচারে দেরি হওয়ায় দমদম জেলে অশান্তি হয়েছিল, গুলি চলেছিল। এখন বিভিন্ন জেলের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
মাদক মামলার (এনডিপিএস কেস) বন্দিদের বড় অংশ তরুণ। দ্রুত বিচার না-হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই সরকার তৎপর হোক। দমদম জেলের কথা স্মরণে রাখা হোক,’’ বলেন রঞ্জিতবাবু।