ফাইল চিত্র।
‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) বা অনাপত্তি শংসাপত্র দিয়েও রাজ্য সরকার কিছু আইপিএস অফিসারের ক্যাডার বদলের ব্যাপারে পরে আপত্তি তুলেছে। কিন্তু ওই অফিসারেরা ‘পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডার’ ছেড়ে দিতে চান। ছাড়পত্র দিয়েও সরকার বেঁকে বসায় মামলার পথে হাঁটছেন তাঁরা। এই নিয়ে পুলিশ মহলের অন্দরে চলছে বিস্তর জল্পনা।
আইপিএস মহলের খবর, ‘পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডার’ ছাড়তে চেয়ে রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিন জন আইপিএস অফিসার। প্রাথমিক ভাবে অনুমতি দিলেও পরে তাঁদের আর ছাড়তে চায়নি রাজ্য। ক্যাডার বদলের সিদ্ধান্তে অনড় ওই আইপিএস অফিসারেরা মামলা করেন দিল্লির সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল বা ক্যাটে। ক্যাটের রায় দু’জন আইপিএস অফিসারের পক্ষে গিয়েছে। তৃতীয় জনের মামলা চলছে। তাঁদের পথ ধরে রাজ্যের আরও এক আইপিএস অফিসার একই দাবিতে ক্যাটের দ্বারস্থ হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, আইপিএস অফিসারেরা যে-রাজ্যে কর্মজীবন শুরু করেন, সেই রাজ্যই সংশ্লিষ্টদের ‘ক্যাডার রাজ্য’ হিসেবে নির্দিষ্ট হয়ে যায়। ক্যাডার অর্থাৎ রাজ্য বদল করতে গেলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অনুমতি (নো-অবজেকশন) নিতে হয়। তার ভিত্তিতে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করলে তা মঞ্জুর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেন্দ্র এক বার আবেদন মঞ্জুর করলে সংশ্লিষ্ট অফিসার যে-রাজ্যে যেতে চান, সেই রাজ্যই তাঁর নতুন ক্যাডার রাজ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। ক্যাডার বদলের পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল। তাই খুব প্রয়োজন না-হলে সাধারণত কেউ সেই আবেদন করেন না। তবে ভিন্ন ক্যাডারের দুই অফিসারের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে উঠলে স্বামী বা স্ত্রী ক্যাডার বদলের আবেদন করতে পারেন। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বৈবাহিক সম্পর্কের যুক্তিতে ক্যাডার বদলের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সম্ভাবনা সব চেয়ে বেশি।’’
পুলিশ মহলের খবর, ক্যাটের দ্বারস্থ হওয়া এ রাজ্যে কর্মরত জুনিয়র ওই আইপিএস অফিসারদের স্ত্রীরা অন্য রাজ্য ক্যাডারের কর্মরত অফিসার। সেই জন্য তাঁরা ক্যাডার বদলানোর আবেদন করেছিলেন রাজ্য সরকারের কাছে। প্রাথমিক পর্যায়ে আবেদন মেনে নিয়ে সরকার ওই তিন জনকেই ছাড়পত্র দিয়েছিল। কিন্তু ক্যাডার বদলের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই মত বদলে রাজ্য তাঁদের আর ছাড়তে চায়নি। রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্যাটে মামলা করেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে এক জন মামলায় জিতে ইতিমধ্যেই ক্যাডার বদলে নিয়েছেন। দ্বিতীয় জনকেও ছেড়ে দিতে বলেছে ক্যাট। তাঁকে ছাড়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। তৃতীয় আইপিএস অফিসারের মামলায় এখনও রায় দেয়নি ক্যাট। অনেক পুলিশ আধিকারিকের, চতুর্থ অফিসারের ক্ষেত্রে রাজ্য যে-হেতু ‘নো-অবজেকশন’ দেয়নি, তাই তাঁর মামলার রায় রাজ্যের পক্ষেই থাকবে।
ক্যাডার বদলের উদাহরণ থাকলেও আগে কখনও এমন জটিলতা তৈরি হয়নি। ক্যাডার বদলের জন্য অতীতে কেউ এ ভাবে আইনের পথে লড়াই করেছিলেন বলে মনে করতে পারছেন না প্রবীণ আমলাদের অনেকেই। সাম্প্রতিক এই উদাহরণ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন তাঁরা।