বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
সঙ্কট পুরোপুরি না কাটলেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক পরিস্থিতিতে উন্নতির লক্ষ্মণ দেখা দিচ্ছে। সোমবার সকালে মেডিক্যাল বুলেটিন প্রকাশের পর এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল বোর্ডের এক সদস্য। সোমবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে প্রকাশিত মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়েছে, সকালে তাঁর সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল।
মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর রক্তে সিআরপির পরিমাণ কমেছে। অর্থাৎ, রক্তে সংক্রমণের মাত্রা আগের তুলনায় অনেকটাই কম। যদিও এখনও তা স্বাভাবিকের অনেকটাই উপরে। আগে তাঁর সিআরপি ছিল তিনশো, এখন সেটাই কমে দেড়শোর কাছাকাছি এসেছে। ক্রিয়েটিনিনের মাত্রাও কমেছে। ফলে তাঁর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন মতো অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বুদ্ধদেব যে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন, এগুলি তারই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। এই পরিস্থিতিতে বুদ্ধদেবের ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের মাত্রা আংশিকভাবে কমানো যায় কিনা, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
সোমবার সকালে হওয়া সিটি স্ক্যানের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক পরিস্থিতির সাংঘাতিক অবনতি হয়নি। তবে সঙ্কট পুরোপুরি কেটে গিয়েছে, এমনটাও বলতে নারাজ চিকিৎসকেরা। সিটি স্ক্যানের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বুদ্ধদেবের দু’টি ফুসফুসই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আগে থেকেই ফুসফুস দু’টি ক্ষতিগ্রস্ত থাকার ফলে ‘লাং ফাইব্রোসিস’-হয়েছে তাঁর। চিকিৎসাবিদ্যার পরিভাষায় এটির অর্থ, ফুসফুসের টিস্যুগুলি শক্ত এবং কঠিন হয়ে যাওয়া।
রবিবার বুদ্ধদেবকে দেখে গিয়েছিলেন হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ সরোজ মণ্ডল। ইকো কার্ডিয়োগ্রাম করান চিকিৎসক ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার রিপোর্ট ভাল বলে জানিয়ে চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বুদ্ধদেববাবুর ‘কার্ডিয়াক ফাংশন’ (হৃদ্যন্ত্রের কাজ) বেশ ভাল। তাই ফুসফুসের অবস্থা খারাপ থাকলেও উনি লড়ে যাচ্ছেন। শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে। রাইলস টিউবের মাধ্যমে তাঁকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। কোনও সমস্যা ছাড়াই তাঁর খাদ্যনালী দিয়ে খাবার শরীরে ঢুকছে। এটা ভাল লক্ষণ।’’
বুদ্ধদেবের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা কৌশিককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেমন আছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সিডেশন (আচ্ছন্ন করে রাখার প্রক্রিয়া) কমিয়ে দেওয়ার ফলে উনি কানে শুনতে পাচ্ছেন। বুঝতে পারছেন, আশপাশটা অনুভব করতে পারছেন। আমরা ডাকলে উনি তাকাচ্ছেন, মাথা নাড়ছেন। কখনও কখনও ইশারায় ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বোঝানোরও চেষ্টা করছেন।’’ বুদ্ধদেবের ব্লাডগ্যাসের মাত্রা ধারাবাহিক ভাবে মাপা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসক। তিনি জানিয়েছেন, ব্লাডগ্যাসের মাত্রা ৫০-এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তিনি এখনই বিপন্মুক্ত নন। বরং সঙ্কটজনকই রয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন ধরেই জ্বর ছিল বুদ্ধদেবের। এমনিতে তিনি সিওপিডি-তে আক্রান্ত। শুক্রবার থেকে শ্বাসকষ্ট বাড়তে বাড়তে শনিবার সকাল থেকেই ক্রমশ আচ্ছন্ন হয়ে যেতে থাকেন তিনি। এর পরেই ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ বুদ্ধদেবকে তাঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, বুদ্ধদেবের দু’টি ফুসফুসেই নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ছড়িয়েছে। পরে রক্ত পরীক্ষাতেও দেখা যায়, কয়েকটি মাপকাঠিতে গোলমাল রয়েছে। হৃদ্যন্ত্রেও কিছু সমস্যা দেখা গিয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তির সময় শরীরে সামান্য তাপমাত্রা থাকলেও, পরে অবশ্য তা ছিল না। হাসপাতালের মেডিক্যাল বুলেটিনেও জানানো হয়, শ্বাসনালিতে সংক্রমণ রয়েছে ৭৯ বছরের রাজনীতিকের। এবং তাঁর ‘টাইপ-২ রেসপিরেটরি ফেলিওর’ হয়েছে। ভর্তির পরেই মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে বুদ্ধদেবের চিকিৎসা চলছে।